আমদানিতে সাত মাসে এলসি বেড়েছে ১২ শতাংশ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানিতে এলসি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানিবিষয়ক সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে গম, ডাল, চিনি, দুগ্ধজাত খাবার ও শুকনো ফল আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে দেশে উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাল ও পেঁয়াজের আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের এলসি খোলাও কমেছে।

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যে বৃহৎ আমদানিকারকরা এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন গতিশীল। ফলে আমদানি বাড়বে এটা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। এছাড়া সামনে রমজান আসছে। এ কারণে কিছু পণ্যের আমদানি বাড়বে। আবার বিনিয়োগ পরিবেশ ইতিবাচক হওয়ায় শিল্প খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভারসহ বড় নির্মাণ কার্যক্রমের কারণ সিমেন্ট খাতে চাহিদা বেড়েছে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক আমদানি বাড়ছে।

এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল ইসলাম বলেন, দেশে বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান থাকায় বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ও এর কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। পাশাপাশি চাহিদা বাড়ায় জ্বালানি ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানিও বেড়েছে। মূলত এসব কারণেই গত বছরের তুলনায় পণ্য আমদানি বেড়েছে।

গত সাত মাসে গম আমদানির জন্য ৮৫ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা; যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ৩৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি। চিনি আমদানিতে ৭১ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। গত সাত মাসে চিনি আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে ৫৪ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২ কোটি ডলার।

শুকনো ফল আমদানির জন্য ২০ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। দুগ্ধজাত খাবার আমদানিতে ১৭ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। তবে দেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আমদানিতে শুল্ক থাকায় প্রধান এই খাদ্যপণ্যের আমদানি প্রায় ৭৪ শতাংশ কমেছে। গত সাত মাসে চাল আমদানিতে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। সাধারণত কিছু ভালো মানের সরু চাল এবং প্রাণী খাদ্য উৎপাদনের জন্য কম দামি চাল আমদানি হয়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রায় ১০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। এছাড়া দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর আমদানি কমেছে ৩৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২৪৩ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। গত সাত মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৩০১ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া সুতা আমদানিতে সাত শতাংশ, ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ২১ শতাংশ, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন আমদানিতে ১৫ শতাংশ, কয়লা আমদানিতে ৫৮ শতাংশ এবং পুরোনো জাহাজ আমদানিতে ১২ শতাংশ এলসি খোলা বেড়েছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা (শুল্ক ব্যতীত) মূল্যের তিন কোটি ৮৫ লাখ টন পণ্য খালাস করেছেন আমদানিকারকরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ বন্দর দিয়ে খোলা পণ্য খালাস হয়েছিল দুই কোটি ৩২ লাখ টন। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি খোলা পণ্য আমদানি হয়েছে। এ বছর অর্থ অঙ্কে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা মূল্যের ৪৩ লাখ ৮৬ হাজার টন জ্বালানি তেল। এর মধ্যে হাইস্পিড ডিজেল, পেট্রোলিয়াম অয়েল, ক্রুড অয়েল ও ফার্নেস অয়েল রয়েছে।

৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার ১০ লাখ ৫ হাজার টন ভোজ্যতেল। একই সময়ে ৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা মূল্যের ২৮ লাখ ৭৭ হাজার টন গম, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকার। আমদানি হওয়া ক্লিংকারের পরিমাণ ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার টন। এছাড়া আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে ৩৪৯ কোটি টাকার ১৪ লাখ ৪০ হাজার টন লাইমস্টোন ফ্লাক্স, ৩০৩ কোটি টাকার ১২ লাখ ৬০ হাজার টন গ্র্যানুলেটেড সø্যাগ, ৫০৩ কোটি টাকার ৯ লাখ ৪২ টন কয়লা ও ৫৩৫ কোটি টাকার ১ লাখ ৩৩ হাজার টন আপেল। আরও আছে স্ক্র্যাপ ভেসেল, অপরিশোধিত চিনি, বিটুমিন, কয়েলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উল্লেখযোগ্য।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০