Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:37 am

আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমল

আয়নাল হোসেন: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল চালের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে চাল আমদানির খবরে রাজধানীর পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। গত দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি কমেছে সর্বোচ্চ দুই টাকা। শুধু তা-ই নয়, বাজারে চাল বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুই থেকে তিন দিন আগেও তাদের বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৫৬-৫৭ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয় ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ৬২ থেকে ৬৪ টাকার নাজিরশাইল গতকাল বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। আর বিআর-২৮ (লতা নামে পরিচিত) চালের দাম ছিল ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬ থেকে ৬৪ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৬ টাকা। গতকাল মাঝারি মানের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৮ টাকায়, যা আগে ছিল ৫৩ থেকে ৬০ টাকা। আর মোটা চালের দাম সামান্য বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৪ থেকে ৫০ টাকা।

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের মেসার্স নিউ মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন জানান, চাল আমদানির অনুমোদন না দিয়ে দাম নির্ধারণ করে কঠোর নজরদারি করা হলে বেশি ভালো হতো। চাল আমদানির খবরে ইতোমধ্যে বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগে তার দোকানে দৈনিক ১০০ বস্তা চাল বিক্রি হতো। দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে দৈনিক চার থেকে পাঁচ বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ঋণপত্র খোলায় ভারতে দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আগামী বোরো মৌসুমে দেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা কৃষকের সন্তান। আগে কৃষকের কথা ভাবা হবে। আমন মৌসুমে কৃষক ধানের ভালো দাম পেয়েছে। আগামী বোরো মৌসুমেও যাতে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সে বিষয়ে সরকারের নজর রয়েছে।’

বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑদেশের মজুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, মিল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধ, মিল মালিকদের মজুতের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া, সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি। এসব পদক্ষেপ নেয়ার পরও বাজারে চালের দাম কমেনি। পরে সরকার চাল আমদানির শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাজারে চালের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পেছনে মিল মালিকরা জড়িত থাকার অভিযোগ থাকায় তাদের মজুত সক্ষমতা কমানো হয়।

সম্প্রতি দেশের বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গছে। এর পেছনে মূলত মিল মালিকরাই দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের তৃণমূল পর্যায়ের নজরদারিতেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে মিল মালিকদের মজুতের সীমা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ বাজারে ৫০ টাকার নিচে চাল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চাল আমদানিতে সরকার ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছিল। এতে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে ২৩ টাকা ব্যয় হতো। বর্তমানে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর বর্তমানে শুল্ক কমানোয় প্রতি কেজি চালে ৯ টাকা শুল্ক দিতে হবে। বাজারে চালের ঘাটতি রয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে বাজারে চালের দামও অস্বাভাবিক। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই আমদানি করবেন।

চাল আমদানিকারকরা জানান, এক সময় ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হতো। কিন্তু সরকার কৃষকের স্বার্থে চাল আমদানিতে বড় ধরনের শুল্কারোপ করে। আর এতে বন্ধ হয়ে যায় চাল আমদানি। তবে বর্তমানে বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সরকার জিটুজি পদ্ধতি ছাড়াও বেসরকারিভাবে চাল আমদানির ওপর জোর দেয়। এর অংশ হিসেবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, চালের মূল্য কমার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সেদিকে সরকারের কঠোর নজরদারি রয়েছে। সরকার প্রয়োজনে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বিপুল পরিমাণ ধান কিনবে। সরকারের গুদাম ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ভোক্তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে চাল আমদানি করা হচ্ছে। তবে তা নির্ধারিত সময়ের জন্য। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।