জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: দেশে অক্টোবর থেকে চলছে হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এতে কাঁচামাল আমদানি কমার সঙ্গে কমছে উৎপাদন। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমছে। এতে ভ্যাট আদায়ে প্রভাব পড়ছে। তবে এনবিআর বলছে, ভ্যাট আদায়ে ভিন্ন কৌশল নেয়া হয়েছে। যার ফলে ভ্যাট আদায়ে প্রভাব পড়ছে না। উল্টো এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ রয়েছে।
গতকাল বুধবার আগারগাঁও এনবিআর সম্মেলন কক্ষে ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর কর্মকর্তারা এই দাবি করেছেন। অন্যদিকে, সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ইএফডি বসানোর উদ্বোধনের পরে এনবিআর কিংবা জেনেক্স সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫০৫টি প্রতিষ্ঠানে ডিভাইস বাসাতে পেরেছে। যার মধ্যে ১৮ হাজার ৫টি ইএফডি ও ৫০০ এসডিসি। লক্ষ্য তিন লাখ মেশিন স্থাপন। যা করতে পারলে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হবে।
তিনি বলেন, ভ্যাটদাতারা যেন পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সময় ইএফডি মেশিনের চালান ব্যবহার করে প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত লটারিতে অংশগ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, এজন্য চালান সংগ্রহ করতে হবে। ইএফডিতে ১০১টি পুরস্কার। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইএফডি চালানের লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হয়। লটারিতে ১ লাখ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যমানের ১০১টি পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। ভ্যাট দিবস ও আট সপ্তাহে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে।
তথ্যমতে, অক্টোবর পর্যন্ত আদায় করা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেয়া কর্মসূচি, হরতাল, অবরোধের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামনে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআর কোনো ঝুঁকি দেখছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি ও আইসিটি, গ্রেড-১) মাসুদ সাদিক বলেন, আমরা জানি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যদি স্থিতিশীল থাকে এবং অর্থনীতির অন্যান্য প্যারামিটারগুলো ভালো থাকে। তখন রাজস্ব আয়ও আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আমরাও বিশ্বাস করি, ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি থাকলে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়ে কোনো ঝুঁকি রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছু পজিটিভ ইমপ্যাক্টও আছে। যেমন: সিগারেট, সফট ড্রিঙ্কস বিক্রি বেড়েছে।
এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান বলেন, ভ্যাট চালান ইস্যুর ক্ষেত্রে আমরা গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে আমরা বের হয়ে আসছি। আমরা এখন পর্যায়ক্রমে খুচরা পর্যায়ে ইএফডি মেশিন চালু করছি। ইতোমধ্যে আগের যে সিস্টেম, সেখানে আমরা সাড়ে নয় হাজার ইএফডি মেশানো বসিয়েছি। এসব মেশিন ইফেক্টিভ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমরা দেখেছি, আগের মেশিন বসানোর আগে তারা ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ভ্যাট দিয়েছে। মেশিন বসানোর পর আমরা সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট পেয়েছি। মেশিন বসানোর পর স্বচ্ছতা এসেছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট আদায় আরও জোরদার করার জন্য আমরা বেসরকারি পর্যায়ে ছেড়ে দিয়েছি। এনবিআর ও আউটসোর্সিং করা প্রতিষ্ঠান মিলে আমরা নতুন করে প্রায় ১০ হাজার মেশিন বসানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামে ৬০ হাজার মেশিন বসানো আমাদের লক্ষ্য। এটি সফল হলে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমরা ইএফডি মেশিন ছড়িয়ে দেবো। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তিন লাখ মেশিন বসানো হবে।
আমদানি কমে যাওয়ার সঙ্গে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে ভ্যাট আদায়ে প্রভাব পড়ছে। ভ্যাট আদায়ের এই চ্যালেঞ্জ এনবিআর কীভাবে মোকাবিলা করবেÑ এমন প্রশ্নের জবাব ড. মইনুল খান বলেন, আমদানি কমে যাওয়া, উৎপাদন কম হওয়া আমাদের কাছে উদ্বেগের একটি কারণ। উৎপাদন কমলেও আমরা কিছু কৌশল অবলম্বন করার ফলে ভ্যাট আদায় বেড়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের ভ্যাট আদায় প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ। এটা অভাবনীয় সাফল্য। কারণ আমরা দেখেছি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না। আমরা ভিন্ন কৌশলে ভ্যাট আদায় করছি। তা হলো-যেখানে রেভিনিউ গ্যাপ বা লিকেজ আছে সেখানে আমরা কাজ করছি। মনিটরিং ও নেট বাড়ানো হয়েছে।
ভ্যাটের বকেয়া আদায় ও মামলা বিষয়ে সদস্য (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর আমরা ভ্যাট আদায়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা কাজ করি। বৈশ্বিক ও দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে এবার চ্যালেঞ্জ আরো ভিন্ন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বকেয়া আদায়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কাজ করছি, আদায় হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় অডিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মামলার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হয়েছে। অনেক বেশি মামলার রায় সরকারের পক্ষে আসছে। এতে রাজস্ব দ্রুত আদায় হচ্ছে।