সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের কারণে এক মাসের ব্যবধানে দেশে চীনা রসুনের দাম কমেছে ৬২ শতাংশেরও বেশি। এক মাস আগে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোয় আমদানি করা রসুনের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৩৯ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে কমে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। পাশাপাশি ভারতীয় ও দেশি রসুনের দাম কমেছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রসুনের পাইকারি দাম এখন কমতির দিকে। তবে খুচরা ক্রেতারা এর সুফল পাচ্ছেন না।
আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গত ১ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা রসুন বিক্রি হয় প্রতি টন দুই হাজার ৭৫০ থেকে দুই হাজার ৮০০ ডলারে। প্রতি ডলারের মূল্য ৮০ টাকা হিসাবে প্রতি কেজি রসুনের মূল্য দাঁড়ায় ২২০ টাকা থেকে ২২৪ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পর্যন্ত এ খরচ পড়ছে। এরপর শুল্ক, গাড়ি ভাড়া, কুলি-মজুর, আড়তদারি খরচ বাবদ কেজিপ্রতি রসুনের দামের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ১২ থেকে ১৫ টাকা। ফলে কেজিপ্রতি রসুনের দাম পড়ে ২৩২-২৩৯ টাকা। কিন্তু জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দরপতন হয় রসুনের। গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা রসুন বিক্রি হয় প্রতি টন ৭০০ ডলার থেকে এক হাজার ডলারে। প্রতি ডলারের মূল্য ৮০ টাকা হিসাবে প্রতি কেজি রসুনের মূল্য দাঁড়ায় ৫৬ থেকে ৮০ টাকা। সব মিলে পাইকারি বাজারে এখন আমদানি করা চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকায়। এ অবস্থায় খুচরা দোকানগুলোতে এখনও আগের দামেই আমদানি করা চীনা রসুন বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রসুন আমদানি হয়েছে ২৭ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে এসেছে দুই হাজার ৬২৬ টন, আগস্টে চার হাজার ৪৩৭ টন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৯০৪ টন, অক্টোবরে তিন হাজার ৫৮১ টন, নভেম্বরে আমদানি হয়েছে দুই হাজার ২৫৪ টন, ডিসেম্বরে দুই হাজার ৩৯১ টন, চলতি বছরের জানুয়ারি তিন হাজার ১৯০ টন, ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে দুই হাজার ২৯২ টন, মার্চে দুই হাজার ৪৩ টন ও এপ্রিল মাসে রসুন আমদানি হয়েছে এক হাজার ৩১৯ টন। যা অন্যান্য বছরের আমদানির চেয়ে বেশি। এ ধারাবাহিকতা অন্যান্য মাসেও রয়েছে।
গতকাল খাতুনগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চীনা রসুনের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর ভারতীয় রসুন বিক্রি হয়েছে মাঝারি থেকে ভালো মানেরগুলো ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে দেশি রসুনের এখন সরবরাহ কম। ফলে ছোট দানা ৭০ ও বড় দানা ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রামে খুচরা বাজার ও দোকানগুলোয় চীনা রসুন প্রতি কেজি ১৫০-১৮০ টাকা। পশ্চিম বাকলিয়ার পিএম স্টোরের স্বত্বাধিকারী শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি করছি ১৮০ টাকা করে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে গতকাল চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগেও পণ্যটি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে চীনা রসুনের দাম কমেছে ৪৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, রসুন আমদানিতে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন। তারাই নিয়মিত রসুন আমদানি করে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকায় এবং দেশে মাঝে ডলারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আমদানি খরচও বেড়ে গিয়েছিল। ফলে বাজারে রসুনের দাম বেশি ছিল। পাইকারি রসুন ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন বলেন, বছরের প্রথম তিন-চার মাস তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করেছি। কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকার ওপর লোকসান দিয়েছি। আর গত দুই মাস ধরে বাজার একটু বাড়তির দিকে ছিল। ফলে লোকসান একটু হলে পুষিয়ে নিতে পেরেছি। তবে এখন বাজারে রসুনের সরবরাহ বেশি ও দামও অনেক কমেছে। ধারণা করছি, আগামী কয়েক মাসে দাম বাড়বে না।
পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রসুন আমদানিকারক মেসার্স আজমির ভাণ্ডারের পরিচালক এটিএম শামসুদ্দোহা শেয়ার বিজকে বলেন, কৃষিপণ্য বিক্রি করে কখনও লোকসান, আবার কখনও লাভ করা যায়। সম্প্রতি বাজার কিছুটা চাঙা থাকলেও এ বছর লোকসানের পরিমাণই বেশি ছিল। কেননা প্রতি কনটেইনার (২২ টনে এক কনটেইনার) রসুন আমদানি করে চার-পাঁচ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। কারণ আমাদের বাজার তো আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। এখানে কেউ বেশি লাভ করবেÑএ সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, দেশে বছরে মোট রসুনের চাহিদা রয়েছে পাঁচ লাখ টন। চাহিদার বেশিরভাগ রসুন চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর ৩০ শতাংশেরও কম রসুন দেশে উৎপাদিত হয়।
Add Comment