Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:12 am

‘আমদানি করা পোশাকের চেয়ে দেশি ফ্যাশন হাউজের পোশাক উন্নত মানের’

অনেক উদ্যোক্তা দেশি কাপড় দিয়ে ফ্যাশন্যাবল পোশাক তৈরির চেষ্টা করছেন। তাদের দেখানো সেই পথে দেশের ফ্যাশন জগতে শৈল্পিক পরিবর্তন এসেছে। আগ্রহী হয়ে উঠছেন ক্রেতাসাধারণ। এমনি এক উদ্যোক্তা নূজহাত নূয়েরী কৃষ্টি। তিনি চট্টগ্রামের কৃষ্টি বুটিক হাউজের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিজাইনার। সম্প্রতি দেশি কাপড়, বুনন, রঙ নকশার বৈচিত্র্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ ইউ আলম

শেয়ার বিজ: দেশের বর্তমান বুটিক ও কারুশিল্প সম্পর্কে বলুন।

নূজহাত নূয়েরী কৃষ্টি: ফ্যাশন হাউজগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে আমাদের পোশাক কেনার অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। আগে শুধু ঈদ-পূজা ঘিরে কেনাকাটা হতো। এখন বাংলা নববর্ষ, মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা ফাল্গুনসহ নানা উপলক্ষ ঘিরে পোশাক কেনার প্রবণতা বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজ নিজস্ব শিল্পমাত্রা ঠিক রেখে দেশি ফ্যাশন শিল্পকে এগিয়ে নিচ্ছে।

শেয়ার বিজ: বুটিক হাউজগুলোর সময়ের বিবর্তন সম্পর্কে বলুন।

নূয়েরী কৃষ্টি: স্বাধীনতা পরবর্তী দশ বছরে কারিকা, কুমুদিনী, সেতুলী, জয়া, শুকসারি ও টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরসহ কয়েকটি বুটিক বাজারে আসে। তারা পোশাকে দেশজ ভাবনা ফুটিয়ে তোলে। তাদের প্রচেষ্টা সফল। এরপর আশির দশকে এর বিকাশ ঘটে। তখন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়। তাদের তৈরি পোশাক বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ পোশাকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলে তারা। এক সময়ে ঘরোয়া বা শৌখিন আঙ্গিকে গড়ে ওঠা সেইসব ছোট বুটিক হাউজ সময়ের বিবর্তনে এখন নামিদামি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। যেমন আড়ং, অঞ্জন’স, নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, রঙ, নগরদোলা, সাদাকালো, প্রবর্তনা, শ্রদ্ধা, বাংলার মেলা, অন্যমেলা, নবরূপা, গ্রামীণ চেক, নীলাঞ্জনা, ওজি, বিবিআনা, দেশাল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান আজ নামকরা ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত। আশার কথা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরেও ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত করতে পেরেছে। দেশি পোশাকের প্রতি সচেতনতা তৈরি হলে এ বাজার আরও সম্প্রসারণ হবে।

শেয়ার বিজ: একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা হিসেবে কীভাবে ক্রেতাদের

মূল্যায়ন করবেন?

নূয়েরী কৃষ্টি: আমি মনে করি, আমদানি করা পোশাকের চেয়ে দেশি ফ্যাশন হাউসের পোশাক উন্নত। আমাদের সুতার মান ভালো। পাকা রঙে ব্যবহার করা হয়। দামও সাশ্রয়ী। বেশ আরামদায়ক। দেশি কাপড় অনেক মানসম্মত ও টেকসই। অথচ গ্রাহকরা বিদেশি কাপড় বেশি পছন্দ করেন। অনেক ক্রেতা আছেন দেশি কাপড়ের নাম শুনলে আর কিনতে চান না। তবে কিছু ক্রেতা আছেন যারা দেশি কাপড়ের মূল্য বোঝেন। প্রতিযোগিতা থাকলেও দেশি পোশাকের বাজার ভালো। প্রতিনিয়ত বাহারি রঙের মসলিন, সুতি, সিল্ক, জর্জেটের মতো দেশি কাপড়ে নিত্যনতুন নকশায় শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্কার্ট, সালোয়ার কামিজসহ রুচিসম্মত নানা পোশাক তৈরি হচ্ছে।

শেয়ার বিজ: অনেকটা নীরবে বিকশিত হলেও প্রচার সীমিত কেন?

নূয়েরী কৃষ্টি: দেশি ফ্যাশনের প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের আগ্রহ আছে। তারা এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে করি। তবু আমরা প্রচারণায় পিছিয়ে আছি। রাজধানীকেন্দ্রিক কিছু বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়মিত বিক্রি চলে। চট্টগ্রাম বা সিলেটে নামিদামি ফ্যাশন হাউসের দুই-একটি বিক্রয়কেন্দ্র থাকলেও দেশের অন্যান্য বিভাগীয় কিংবা জেলা শহরে তাদের পণ্য পাওয়া যায় না। অপ্রতুল ব্যাংক ঋণ ও মার্কেট স্পেসের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে সীমিতভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যে কারণে আগ্রহ থাকলেও প্রচার বাড়ছে না। আমাদের প্রচারণা বাড়ানো উচিত।

শেয়ার বিজ: বর্তমান বাজার সম্পর্কে বলেন।

নূয়েরী কৃষ্টি: চাহিদা বাড়ার কারণে দেশি পোশাকের বাজার বড় হচ্ছে। ছোট বড় মিলিয়ে দেশে এখন ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এতে বছরে দশ হাজার কোটি টাকার বেশি টার্নওভার হয়।

শেয়ার বিজ: ফ্যাশনের সঙ্গে তরুণদের সম্পর্কটাকে কীভাবে দেখছেন?

নূয়েরী কৃষ্টি: ফ্যাশনে তরুণদের অংশগ্রহণ আছে বলেই তো আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের অধিকাংশ শিক্ষিত। দেশ নিয়ে ভাবে। বিদ্যমান ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। ফলে তরুণরা সানন্দে দেশি কাপড়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। আগে শুধু ঈদ-পূজায় কেনাকাটা হলেও এখন সব ধরনের উৎসবে পোশাক কেনার হিড়িক পড়ে। আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়, ‘বিদেশি পোশাক মানে ভালো’ এ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক ক্রেতা। গত চার দশকে বাংলাদেশি ফ্যাশনের যে বিবর্তন, তাতে বড় ভূমিকা রাখছে তরুণরা।

শেয়ার বিজ: এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে কী করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

নূয়েরী কৃষ্টি: দেশি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর শৌখিন ক্ষুদ্র দোকান বা বুটিক হাউসে সীমিত নেই। তাদের পুরো কর্মকাণ্ডই এখন একটি বিকাশমান শিল্প। কিন্তু এ শিল্পের জন্য সরকারি নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা নেই। একে এগিয়ে নিতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক উদ্যোগ নিলে ব্র্যান্ডগুলো আরও ভালো করবে। নতুন ব্র্যান্ড গড়ে উঠবে। তাছাড়া ব্যাংকঋণ পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় একজন নারী উদ্যোক্তাকে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফল হতে নতুন নকশা উদ্ভাবন গবেষণা করতে হবে। বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।