Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:37 am

আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম:প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে অলিখিতভাবে বন্ধ রয়েছে পুরোনো জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপ বিক্রি। এতে সংকটে পড়েছে দেশের ছোট-বড় শতাধিক ইস্পাত কারখানা। এসব কারখানার উৎপাদন সচল রাখার প্রধান কাঁচামালের জোগান আসে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম নিম্নমুখী এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা না থাকায় দাম কমার অজুহাতে স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীরা একযোগে ইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপ বিক্রি হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা দেন। অথচ গত এক মাসে এসব ব্যবসায়ীরা ১৪টি পুরোনো জাহাজ আমদানি করে। ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ রেখে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। 

বাংলাদেশ শিপব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারের পুরোনো জাহাজের দরপতন, অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা কমে যাওয়া এবং কর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে  শিপব্রেকিং খাত সংকটে পড়েছে। আর এ নাজুক অবস্থার কারণে গত ১২ সেপ্টেম্বর সমিতির সদস্যদের এক জরুরি সভায় সাময়িকভাবে স্ক্র্যাপ বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ খাতের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ২০-২৫টি পর্যন্ত পুরোনো জাহাজ আনা হতো। গত তিন মাসে কাটার জন্য ১০টিও জাহাজ আনা হয়নি। হঠাৎ  দাম কমার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম কমে যাওয়ায় জাহাজ কাটায় কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় ইস্পাত কারখানাগুলো শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে না কিনে সরাসরি বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করছে। এতে কারখানাগুলোর খরচ কম হলেও ইয়ার্ড মালিকরা লোকসানে পড়েছেন। এছাড়া চলতি বাজেটে নতুনভাবে ইয়ার্ড থেকে প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রির ওপর এক হাজার টাকা করে স্থানীয় কর আরোপ করা হয়। অথচ ইয়ার্ডগুলোয় আগে আমদানি করা জাহাজের স্ক্র্যাপ রয়েছে। যখন আমদানি করা হয়েছিল, তখন প্রচলিত সব ধরনের রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এ খাতে সংকট প্রকট হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছর এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চট্টগ্রাম কাস্টমস দিয়ে দেশের স্ক্র্যাপ জাহাজ ব্যবসায়ীরা ৪৬৪টি পুরোনো জাহাজ আমদানি করেছিলেন। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত জাহাজগুলোর মোট ব্যয় ছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব জাহাজ আমদানির বিপরীতে ৮৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পুরোনো জাহাজ ব্যবসায়ীরা মোট পাঁচ হাজার ৪৪৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭৬টি পুরোনো জাহাজ আমদানি করে। বিপরীতে কাস্টমস হাউসকে রাজস্ব দিয়েছে ৩২৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ছিল সাত হাজার ৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৩৩টি জাহাজ আমদানি করা হয়। অন্যদিকে গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমানায় স্ক্র্যাপ জাহাজ ছিল; যা গত এক মাসে আমদানি করা হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বরের বন্দর জলসীমানায় ছিল মাত্র একটি জাহাজ। এছাড়া আগামী এক মাসে বন্দর সীমানায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে, আরও আসবে।       

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ পুরোনো জাহাজ আমদানিকারক আরেফিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল আহমদ শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের বাজারের মূলত ইস্পাত কারখানায় স্ক্র্যাপের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্ক্র্যাবের দাম পড়ে যায়। ফলে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্ক্র্যাপ বিক্রয় বন্ধ রাখা হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের পুরোনো জাহাজের দাম কমেনি। তিনি বলেন, গত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমানায় ১৪টি পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে বিক্রয় বন্ধ রাখার কারণে কি বাজারের ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ধরনের প্রভাবই বাজারে পড়েনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও স্ক্র্যাপ বিক্রয় শুরু হবে।   

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক বড় একটি ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলেন, এক মাস আগে হঠাৎ করে ইয়ার্ড মালিকরা মিলে স্ক্র্যাপ বিক্রয় বন্ধ ঘোষণা দেন। এটা কাম্য নয়। ব্যবসায় তো সবসময় লাভ থাকবে এমন কথা নেই। এক সময় লোকসানও হবে। এটাই তো ব্যবসায়ের নিয়ম। কিন্তু তাদের অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণে হুমকিতে পড়েছে ছোট-বড় অনেক ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এ খাতের কিছু ব্যবসায়ী আমাদের জিম্মি করে বাজার অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে ইস্পাত খাতকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। এক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে পারবে। কিন্তু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের তো এ ধরনের সুযোগ নেই। ফলে তারা সংকটে পড়ছে। আর যাদের নিজস্ব একাধিক স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড আছে তারা উৎপাদন সচল রেখেছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা কম কথাটি সঠিক নয়। আসল কথা দাম কমেছে, তারা কম দামে বিক্রি করবে না।