Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:12 pm

আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও দেশের উত্তরের কৃষিনির্ভর খরাপ্রবণ একটি জেলা। ভারী কোনো শিল্প কারকারখানা এখনও স্থাপন না হওয়ায় কৃষি কাজই এ জেলার মানুষের একমাত্র আশা ভরসা। তবুও এই কৃষিকাজে বিভিন্ন দুর্যোগ লেগেই আছে। চলতি মৌসুমে খরা কারণে আমনক্ষেত নিয়ে বিপাকে কৃষক। সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে চারা রোপণ করছেন করেছেন কৃষক। আর এই চারা রোপণকৃত আমনক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পরেছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। ফলে বেশ কিছু অঞ্চলে কৃষক বিএমডি’র গভীর নলকূপের ও শ্যালোমেশিন সাহায্যে পানি দিতে দেখা যায়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান, আখানগর, ভেলারহাট, দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি ও জেলার বালিয়াডাঙ্গী পীরগঞ্জ, হরিপুর, রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় আমন রোপণের জমি ও আমনক্ষেত শুকিয়ে ফেটে চৌচির। এই আমনক্ষেত বাঁচাতে অনেক কৃষককে বিএমডি’র গভীর নলকূপের সাহায্যে সম্পূরক সেচ দিতে দেখা যায়। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উঁচু জমিতে লাগানো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এতে করে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন এ জেলার কৃষকেরা।অপরদিকে ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা পরেছেন নতুন সমস্যায়। আমনক্ষেতে পানি নিতে শ্যালোমেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎ চালিত পাম্প ব্যবহার করে সেচকাজ করার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না থাকায় সেটা ব্যাহত হচ্ছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপগুলোও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে ঠিকমতো চলতে পারছে না। ফলে নানামুখী সমস্যায় পড়েছেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক পজিরুল ইসলাম জানান জানান, তিনি এ বছর ছয় একর জমিতে আমন ধান রোপণ করবেন। গভীর নলকূপের সেচ দিয়ে কিছুটা রোপণ করেছেন কিছুটা এখনো বাকি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদে আর বৃষ্টি না হওয়াতে বিপাকে পরেছেন। কারণ বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমনক্ষেতের জমিগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বিএমডি’র গভীর নলকূপের সাহায্যে সম্পূরক সেচ দিয়ে তিনি ক্ষেত টিকিয়ে রাখছেন জানান। সদর উপজেলার ভেলারহাট গ্রামের কৃষক বদিরুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর সাত একর জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। কিন্তু গত দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড রোদে আর বৃষ্টি না হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন। কারণ বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমনের ক্ষেত শুকিয়ে যায়। তিনি বিএমডি’র গভীর নলকূপের সাহায্যে কম খরচে কিছু জমিতে সম্পূরক সেচ দিচ্ছেন অবার কিছু জমিতে পাইপ লাইনের সুবিধা না থাকায় সেচ দিতে পারছেন না। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সদর উপজেলার নদীপাড়া এলাকার কৃষক আলম হোসেন জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছর তিনি তিন একর (৩০০ শতক) জমিতে আমন লাগান। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে ধান লাগিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। তিনি জানান, আমাদের এলাকা বিএমডি’র অনেক গভীর নলকূপ রয়েছে। কিন্তু পাইপলাইনের স্বল্পতার কারণে অনেক উঁচুু জমিতে পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান আমন এবং বোরো মৌসুমে খরা প্রতিরোধ ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এবং দেশের অর্থনীতি ও দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করতে বরেন্দ্র অঞ্চলে অধিক পরিমাণে বিএমডি’র নতুন গভীর নলকূপ বা সোলার সেচ পাম্প স্থাপন ও পাইপ লাইনের বরাদ্দ দেয়া দরকার। তাহলে বহুগুণে ফসল উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং কৃষকের খরচ কমবে। দেশ লাভবান হবে।

ঠাকুরগাঁও বিএমডি’র প্রকল্প পরিচালক, রেজা মুহাম্মদ নুরে আলম জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে গভীর নলকূপের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও তেল সাশ্রয়ী কিছু পাঁচ কোয়া সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যা দিয়ে অল্প খরচে কৃষক ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন। ঠাকুরগাঁও বিএমডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ১ হাজার ৪৮৮ গভীর নলকূপ ও এলএলপি চালু রয়েছে। যর মাধমে কৃষক আমন ও বোরো মৌসুমে ধান, গম, গম, ভুট্টা, মরিচসহ বিভিন্ন ক্ষেতে স¡ল্প খরচে সেচ দিতে পারছে। যে এলাকায় পাইপ লাইন স্বল্পতা রয়েছে সেসব স্থানে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা অল্প খরচে জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন।

সূত্র জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৯৮ হাজার ৭৪০ হেক্টর। যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, অন্যান্য ফসলের মতো ধানের জন্যও বিখ্যাত এ জেলা। প্রচুর পরিমাণে ধান এ জেলায় উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও কৃষকদের যাবতীয় কৃষিসেবা প্রদান করা হয়। বৃষ্টির পানির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উঁচু জমিতে পানি থাকছে না। তবে বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পগুলোও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে তিনি আশা করেন।