নজরুল ইসলাম: অন্যের প্লট হাতিয়ে নিতে প্রথমে ভগ্নিপতিকে আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) নিযুক্ত করেন। এরপর ভগ্নিপতির কাছ থেকে প্লটটি কিনে নেন। সেই প্লট ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে বহুতল ভবন বানিয়ে ভাগে পাওয়া ফ্ল্যাটগুলো বেচেও দেন। তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. বদিউল আলম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সাবেক সরকারি এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে দুদক। মামলার বাদী ও তদন্তকারী উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম চার্জশিটটি দাখিল করেছেন।
২০০৫ সালের ১৩ মার্চ থেকে ২০০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বদিউল আলম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) এবং ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) হিসেবে জমির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার সেগুনবাগিচার গৃহসংস্থান অধিদপ্তর থেকে ১৯৯৪ সালে ফজলুল হক চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি মিরপুর হাউজিং এস্টেটের সম্প্রসারিত রূপনগর আবাসিক এলাকায় (সেকশন-৮, ব্লক-বি, রোড নম্বর-৩, প্লট নম্বর-২৪) দুই কাঠার একটি প্লট ৯৯ বছরের জন্য লিজমূলে বরাদ্দ পান। বরাদ্দের অনুকূলে ফজলুল হক চৌধুরী চার কিস্তিতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে ফজলুল হক চৌধুরী মারা যান। মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশরা নূরজাহান বেগম (স্ত্রী), চৌধুরী আজিজুল হক (ছেলে), চৌধুরী আমিনুল হক (ছেলে), চৌধুরী মোজাম্মেল হক (ছেলে), হোসনেয়ারা জামান (মেয়ে), ফাতেমা বেগম (মেয়ে) ও পারভীন আক্তার চৌধুরী (মেয়ে) ওয়ারিশ সূত্রে ওই প্লটের মালিক হন। কিন্তু তাদের প্লটটি বুঝিয়ে না দিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঝুলিয়ে রাখে। ২০০৫ সালের মে মাসে ফজলুল হক চৌধুরীর সন্তানরা তাদের নামে অন্য আরেকটি প্লট বরাদ্দ দিতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৪৮তম বোর্ডসভায় ফজলুল হকের নামে বরাদ্দ প্লটটির ব্যাপারে আলোচনা হয়। ওই সভায় দুই কাঠার প্লটের পরিবর্তে বিকল্প প্লট হিসেবে তাদের নামে বি-ব্লকের এভিনিউ-৫ এ ১১/১ নম্বর প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৬৩ কাঠা।
এদিকে বদিউল আলমের নেপথ্য কারসাজিতে ফজলুল হকের নামে বরাদ্দ প্লটটির ব্যাপারে যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মাসুদ করিমকে ২০০৭ সালের ৬ জুন আমমোক্তার নিযুক্ত করা হয়। তিনি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য বদিউল আলমের আপন ভগ্নিপতি। তিনি ভগ্নিপতির কাছ থেকে ওই প্লটটি ২০ লাখ ৪১ হাজার টাকায় ২০১০ সালের ১৬ মার্চ কিনে নেন। মাসুদ করিম প্লটটি ২০ লাখ ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও ফজলুল হকের ওয়ারিশদের মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন। বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। বদিউল আলম প্লটটির মালিক হয়ে খান প্রপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। তিনি সেখানে ছয়টি ফ্ল্যাট পান। সবগুলোই বিক্রি করে দেন।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, বদিউল আলম অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্লট দখলপূর্বক স্থানান্তর, রূপান্তর করে ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আর ভগ্নিপতি মাসুদ করিম আত্মীয়তার সম্পর্ক গোপন করে বদিউল আলমের কাছে প্লটটি ২০ লাখ ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বদিউল আলমের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ঢাকার ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে বসবাস করেন। আর মাসুদ করিমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে বসবাস করেন।