Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:58 am

আমরা চাই বিশ্বে শান্তি থাকুক: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় পুরো বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৬ বছরপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। সূত্র: বিডি নিউজ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় চায় সারা বিশ্বে একটা শান্তি বজায় থাকুক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে নানা ধরনের কনফ্লিস্ট আছে, সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রত্যেকে সেখানে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।’

শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে জীবন দেওয়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত। আমরা চাই সারা বিশ্বে শান্তি থাকুক।’

করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করে তিনি বলেন, ‘আবারও অর্থনীতির চাকা সচল হোক, সব মানুষ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারুক, সেটাই আমরা চাই। সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সারাবিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’

দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সুন্দর জীবন নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি আমাদের খাদ্যের ওপর। কারণ আমি জানি, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়ত দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনোমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। তাই আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেওয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’

পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত আকারে অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জিডিপি যেটা টার্গেট ছিল যে আট দশমিক দুই শতাংশের ওপরে যাব, সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমরা এবার পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশের মতো অর্জন করতে

 পেরেছি। কিন্তু আমরা আশা করি আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা আরও বেশি অর্জন করতে সক্ষম হব। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

মুজিববর্ষে জাতির জনকের স্বপ্নের ‘ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার সংকল্পের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘প্রায় ৪০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল, এ দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশে এনেছি। আমরা আরও কমাতে চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে একটা সুন্দর জীবন আমরা উপহার দিতে চাই।’

আর সেজন্য বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযেগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বে কেউ একা চলতে পারে না। তাই সবার সহযোগিতা আমাদের কাম্য। পাশাপাশি কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতা যদি করতে হয়, আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত।’

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৪৬ বছর আগে তার সেই ভাষণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়।

সেই ভাষণে জাতির জনক বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। এখনও সেটাই যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল চালিকাশক্তি, সে কথা অনুষ্ঠানে বলেন তার মেয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

মহামারির কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিশ্বনেতাদের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন ‘ভার্চুয়ালি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত ভাষণ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেখানো হবে ২৬ সেপ্টেম্বর।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে সরাসরি যোগ দিতে না পারার ‘দুঃখের’ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ১৬ বার জাতিসংঘে গিয়ে ভাষণ দিয়েছি এবং আমার ১৭তম ভাষণ দিতে আমি যেতে পারছি না। এটা সত্যিই খুব দুঃখের। কারণ সেখানে বিশ্বের সব দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা সুন্দর সুযোগ হয়, মতবিনিময় করার সুযোগ হয়, একে-অপরের অভিজ্ঞতা আমরা শেয়ার করতে পারি। সেই সুযোগটা করোনাভাইরাসের কারণে হলো না।’

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় দেওয়া ভাষণের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক তার ভাষণে এদেশের দুঃখী মানুষের কথা বলেছিলেন, এদেশের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেছিলেন। সে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বঞ্চিত মানুষের কথা তিনি বলেছেন। আমরা সেটা বিশ্বাস করি। তাই আমাদের উন্নয়নের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে তৃণমূলের মানুষ।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বিশ্বে কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বও অনেক বদলে গেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি না, দরকার হয় অর্থনৈতিক কূটনীতি। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, সবার সঙ্গে মিশে কীভাবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করা যায়, উন্নয়ন করা যায়, একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, একে অপারের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি কীভাবে নিয়ে আসা যায়Ñসেভাবেই আমাদের ডিপ্লোমেসি এখন চালাতে হবে।

বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের’ মোকাবিলা করতে হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে ঘাতকরা জাতির জনককে হত্যা করেছিল, তার দোসর যারা, তারা এদেশে কোনো স্থিতিশীল সরকার থাকুক তারা কখনোই চায়নি। সে জন্য মাঝে মাঝেই চেষ্টা করে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্ট যখন চালায়, তখন আমরা দেখি অগ্নিসংযোগ করে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা অথবা মানুষকে খুন করা। নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর। আমাদের সব অবস্থারই মোকাবিলা করতে হয়।’

আর আওয়ামী লীগ তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে বলেই জনগণের ‘আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে’ বলে মন্তব্য করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ‘তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করতে পেরেছি। আর দীর্ঘসময় একটু ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে এবং উন্নয়নগুলো করতে পারছি, যার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে।’

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।