আমরা যেন নৈতিকতাহীন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছি

রেজাউল করিম খোকন: দেশের অর্থনীতিতে এখন এক ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে, তা আমরা প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছি। ব্যবসা সহজীকরণে বাধা হয়ে আছে দুর্নীতি। বাজেটে সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু এমন কোনো নীতিমালা আমরা দেখছি না। আমরা যেন নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছি ক্রমেই। দুর্নীতি অনিয়মের বড় উৎস হলো ক্ষমতার রাজনীতি। এর মূল ভিত্তি হলো, এখানে বিভিন্ন অনুগত স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে অন্যায় সুবিধা দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে সম্পদের অসম বণ্টন বাড়ে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৎ করদাতারা বঞ্চিত হন। চলমান অর্থনৈতিক সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ভঙ্গুর ও অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও সরকার সংস্কারের পথে হাঁটছে না। দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে; ব্যাংক খাত রয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েই চলেছে; কিন্তু এ পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার-ঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী অন্যায় সুবিধা পাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতির চলমান সংকট মোকাবিলায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বাজেটে সাধারণ করদাতা ও পরিশ্রমী উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেয়া হয়নি। সুবিধা পেয়েছেন কালোটাকার মালিকরা। দুর্নীতি-অনিয়মের বড় উৎস হলো ক্ষমতার রাজনীতি। এর মূল ভিত্তি হলো, এখানে বিভিন্ন অনুগত স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে অন্যায় সুবিধা দেয়া হয়। ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণহীন, প্রশাসনে দুর্নীতি আছে। অর্থনীতিতে নেই আস্থার পরিবেশ। অবাধে কালোটাকার সঞ্চালন হচ্ছে, পাচার হচ্ছে টাকা। অর্থনীতিতে সমস্যা আগে থেকেই ছিল; কিন্তু এত দিন ঢাকা ছিল। এখন এসব সমস্যা বেরিয়ে আসছে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে ক্ষমতার মধ্য থেকেও কিছু সংবেদনশীল খাতকে প্রভাবমুক্ত রাখা যায় কি না, তা দেখতে হবে। বাঘ যেমন দুর্বল হরিণ শিকার করে, এখন করনীতি দেখে মনে হচ্ছে, দুর্বল করদাতারাই যেন এখন লক্ষ্যবস্তু। বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি, যদিও অনেক দিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। আবার মোবাইল ফোন সেবাকে কর সংগ্রহের সহজ উপায় হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।  ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সরকারের অনুগত ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অন্যায় সুবিধা পাচ্ছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে বাজেট সংকোচনের বিকল্প নেই। সংকট কাটাতে বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন দরকার; কিন্তু সরকারের উচ্চতম মহলে সেই উদ্যোগ নেই। বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি। বাজেট প্রণয়নে অর্থমন্ত্রী তিন গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন। এগুলো হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), অলিগার্ক ও আমলা। অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে ব্যাংক ও রাজস্বÑএই দুই খাতে একটি করে কমিশন করা দরকার। এত দিন ধরে আমরা যে চলে পথে এসেছি, সেই পথের পরিবর্তন না হলে ঈপ্সিত গণতন্ত্রে পৌঁছানো যাবে না।

ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন, আর ফেরত দেবেন নাÑদেশে এখন এ মডেল চলছে। খেলাপি ঋণের এ মডেলই এখন দেশের বিজনেস মডেল। ব্যাংক খাতের অবস্থা শোচনীয় এবং এ খাতে সুশাসনে চরম ঘাটতি চলছে। চলমান সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি; তাই সমাধানও এক দিনে হবে না। রাজস্ব খাতের ব্যর্থতার জন্য সরকারের ঋণের বোঝা বেড়েছে। এ রাজস্ব দিয়ে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় সম্ভব নয়। জনগণ কেন কর দেবে, যেখানে প্রায় সব সেবা পেতে উপরি দিতে হয়? বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু অনেক ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় না। আদালতে অনিষ্পন্ন থাকায় বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে আছে; কিন্তু এগুলো খেলাপি ঋণের অন্তর্ভুক্ত হয় না। রাজনৈতিক সরকারকে মেয়াদের প্রথম ও দ্বিতীয় বছরের মধ্যে সাহসী ও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়; কিন্তু সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে তেমন অঙ্গীকার দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি। ক্ষমতাসীন ও দুর্নীতিবাজদের সুবিধা দেব, অন্যদেরও ছিটেফোঁটা এদিক-সেদিক দেব-এমন অনুমিতি ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই চলছে যেন সবকিছু। আইএমএফের কথা শুনে যোগ-বিয়োগ করে নতুন বাজেট করা হয়েছে। এ বাজেটে সংস্কার পুরোপুরি অনুপস্থিত। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।

ব্যাংক খাত ভঙ্গুর থেকে ভঙ্গুরতর হয়ে গেছে। কিছু ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সক্ষমতা কমে গেছে অর্থনীতির। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের আয় কম ও কাজের নিশ্চয়তা নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হয় না; অথচ অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, ব্যয় হচ্ছে। এ খাতে জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা সরকারি সেবা দেবে; কিন্তু তারা জবাবদিহির বাইরে থাকব, এটা ঠিক নয়। তারা জবাবদিহির বাইরে থাকলে কীভাবে চলবে? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে শুভংকরের ফাঁকি আছে। এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে। পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও কৃষি ভর্তুকিকে বলা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যা উচিত নয়। যিনি বিদেশে টাকা পাচার করে বিপণিবিতান করেন, কানাডায় বাড়ি করেন। তিনি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করে ফেলবেন। সৎ করদাতারা ৩০ শতাংশ হারে কর দেবেন। এ ধরনের তুঘলকি কাণ্ড সমর্থন করা যায় না। হাজার হাজার কোটি টাকা যারা পুনঃতফসিল করছেন, এনবিআরের লোকজন তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেন না; কিন্তু গরিব মানুষের এলইডি বাতির ওপর কর বসানো হয়েছে, এটা হতে পারে না। ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, অর্থনীতির এই সবচেয়ে সংবেদনশীল খাতটি এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন অরক্ষিত অবস্থায় বলা চলে। ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা না গেলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছুকাল ধরে চলা মৌলিক কিছু দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসছে। যার ফলে শুধু বাজেটের আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়, প্রয়োজন সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন। প্রশ্ন হলো, সরকারের উচ্চতম পর্যায় থেকে সে ধরনের অঙ্গীকার কি আছে, নাকি বাজেট প্রস্তাবনায় কিছু গা-ছাড়া ধরনের আপ্তবাক্য সংযোজনই কেবল করা হয়েছে? বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো থেকেই তা স্পষ্ট হবে। অর্থনৈতিক সংকট বলি বা অস্থিতিশীলতা বলি। কী করে আমরা এখানে এসে পৌঁছালাম? বিশ্ব অর্থনীতির একাধিক বিপর্যয় থেকে সমস্যার সূত্রপাত সন্দেহ নেই, কিন্তু শুধু সেটাই কারণ হলে সাময়িক সংকট থেকে উত্তরণ সহজ হতো। অতি নিম্ন রাজস্ব সংগ্রহের হার আমাদের অর্থনীতির বড় দুর্বলতা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে কার্যকর সংস্কারে এত দিন অবহেলা করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ক্রমাগত বাজেট ঘাটতি মেটাতে গিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন ঋণের অর্ধেকের সমপরিমাণ ব্যয় হবে ইতোমধ্যে নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধে। এতে ঋণের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতেও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি। প্রশাসনের সর্বস্তরে জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের বদলে ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। অর্থনীতিতে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা যায়নি বলে এবং ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতো আর্থিক লেনদেনের নজরদারির ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে পারা যায়নি বলে অর্থনীতিতে অবাধে কালোটাকার সঞ্চালন ও বিদেশে পুঁজি পাচার হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সময়মতো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি বলে তা এখন গেড়ে বসেছে। এক ধরনের মূল্য প্রত্যাশা বা প্রাইস এক্সপেক্টেশন তৈরি হওয়ার ফলে এখন তা সামাল দেয়া কঠিন হচ্ছেÑযার ভুক্তভোগী সীমিত আয়ের মানুষ। যত দিন অর্থনীতিতে ধারা ও সূচকগুলো অনুকূল ছিল, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি চাঙা ছিল, সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধিও জোরালো ছিল, তত দিন এসব অনিয়ম, অব্যবস্থা ও অপচয়ের বোঝা ঢাকা পড়ে ছিল; এসব সহ্য করার শক্তি ছিল অর্থনীতির। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই বলেই সংকট শুধু সাময়িক নয়, এর থেকে উত্তরণের একটা শক্ত দৃঢ় মধ্যমেয়াদি পথনির্দেশনার প্রয়োজন হবে। প্রচলিত একটা কথা আছে, যে পথ ধরে এত দূর এসেছ, সেই গতিপথ পরিবর্তন না করে ঈপ্সিত গন্তব্যে যাওয়া যাবে না। যেখানে উচ্চবিত্ত করদাতাদের সিংহভাগ আয়ের সঠিক হিসাব দেন না, সেখানে কিছু সৎ করদাতা, হোক না উচ্চবিত্তের, তাদের ওপর উচ্চ করহার চাপিয়ে দিলে তারাও আর সৎ থাকবেন না। এর পাশাপাশি কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয়কে ১৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বৈধ করার প্রস্তাবিত সুবিধাকে সবাই অন্যায্য ও অনৈতিক বলেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং এসব উদ্যোগ নিয়মিত করদাতাদের প্রতি অন্যায্য সিদ্ধান্তকে প্রতিফলিত করে এবং কর প্রদানে নিরুৎসাহিত করে বলে খোদ সরকারের মধ্যেও অনেকে মনে করেন। কালোটাকা সাদা করার এমন সুযোগ পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও আছে। তবে সফল কেবল তারাই হতে পেরেছে, যারা এর মাধ্যমে কর ফাঁকি ও অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক আপসে যায়নি। কালোটাকা সাদা করার বিষয়টি আমাদের এখানে সব সময়ই বিতর্কিত। এখনও এটি বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ বৈধ করদাতাদের ওপর একদিকে বেশি টাকা করারোপ করছে, অন্যদিকে বিনা প্রশ্নে কম হারে অপ্রদর্শিত অর্থকে বৈধ করার সুযোগ দিচ্ছে। এ উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি হলো, অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারার অর্থনীতিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া। এ সুযোগ না দেয়া হলে আরও অর্থ পাচার হয়ে যাবে বলে কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু অর্থ পাচার বন্ধ না হলে আদৌ কি সামষ্টিক অর্থনীতিতে রাজস্বপ্রবাহ বাড়ানো সম্ভব? কালো অর্থনীতির কোনো দেশ বেশি দিন তার সম্ভাবনাকে বা সম্মানের স্থান ধরে রাখতে পারে না। উন্নয়ন অর্থায়নও তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। দেশে বৃহৎ আন্তর্জাতিক কোম্পানির বিনিয়োগও পিছিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে উত্তম পথ হচ্ছে অভিনব পদ্ধতিতে এবং জোরের সঙ্গে কালো অর্থনীতির বিকাশকে রোধ করা, সরকারের সব সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ে মূল্যের যৌক্তিকীকরণ, করহার হ্রাস করে সবাইকে কর প্রদানে উৎসাহিত করা, কর ফাঁকির বিরুদ্ধে শক্ত ও নিষ্ঠুর অবস্থান এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি।

নাগরিকদের প্রায় যেকোনো সরকারি সেবা নিতে গেলেই এখন দুর্নীতির শিকার হতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সেবা গ্রহণকারীদেরও নৈতিক দায়িত্ব আছে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা কোনো অন্যায় সুযোগ, যেমন কর ফাঁকি দেয়ার জন্যই দুর্নীতিতে অংশ নেন; যদিও আমাদের আইনে ঘুষ নেয়া অপরাধ হলেও ঘুষ দেয়া অপরাধ নয়। দুর্নীতি-অনিয়মের সবচেয়ে বড় উৎস হলো আমাদের দেশের ক্ষমতার রাজনীতির ধরন; যার মূল ভিত্তি হলো বিভিন্ন অনুগত স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা বিতরণ। এর ফলে সম্পদের অসম বণ্টন বাড়ে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সৎ উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হন। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা যেভাবে চলছে, তাতে সাধারণ মানুষ এর ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এটা কেবল হতাশাজনক নয়, উদ্বেগজনকও। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে চলছে কি? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা দেখতে পাই, দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকÑএই তিন দিক দিয়েই ভুল পথে যাচ্ছে। গণমানুষের আস্থা হারানোটা বিচলিত হওয়ার মতো ঘটনাই বটে। অতীতে মানুষ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আস্থা হারালেও অর্থনৈতিক নীতির প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। অনাস্থার পাল্লা এভাবে ভারী হতে থাকলে ভবিষ্যতে আশা করার মতো লোকই পাওয়া যাবে না। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ একবার বলেছিলেন, রাষ্ট্র মানচিত্রে থাকে না, রাষ্ট্র থাকে মানুষের হƒদয়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ তথা নাগরিকই সবকিছুর নিয়ামক। সেই নাগরিকদের বৃহত্তর অংশ যখন দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে মনে করেন, তখন চিন্তারই কথা।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০