‘আমরা সবাই পরিবারের জন্য নির্ভেজাল পণ্য খুঁজি’

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের ঠিক বিপরীত দিকে দক্ষিণ কুড়িলে অবস্থিত সুফ্ফা ডিপার্টমেন্ট স্টোর। এখানে পাওয়া যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যপণ্য। ন্যায্যমূল্যে মানুষের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত স্টোরটির স্বত্বাধিকারী মো. তায়েব-উল-আলম। পেশায় ব্যবসায়ী ও মার্চেন্ডাইজার। ব্যবসার নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেন শেয়ার বিজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

আপনার দোকানের স্লোগান ‘ন্যায্য মূল্যের শপ’। এ স্লোগানের ব্যাখ্যা কী?

আসলে ন্যায্য মূল্যকে সংজ্ঞায়িত করা খুব কঠিন। বাজার এতটাই অস্থিতিশীল যে, কোনো মূল্যকেই ন্যায্য বলে দাবি করা যায় না। এলাকাভেদে মূল্যে অনেক ফারাক রয়েছে। আমরা উৎপাদিত মূল্যে আশপাশের পাইকারি দোকানে সরবরাহ করি। কখনো কখনো তার চেয়েও কম রাখার চেষ্টা করি। এজন্যই সেøাগান করা হয়েছে ‘ন্যায্য মূল্যের শপ’।

অন্যান্য স্টেশনারি শপের সঙ্গে আপনাদের মূল পার্থক্যটা কোথায়? মানুষ এখানে কেন পণ্য কিনতে আসবেন?

আমাদের এখানে ভেজালবিহীন পণ্য পাওয়া যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো পণ্য পাবেন না। পরিমাপে নেই কোনো কারসাজি। ভোক্তার কাছে সেরা জিনিসটা পৌঁছে দিতে এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছি। একবার পত্রিকায় একটা খবর পড়ে খুব মর্মাহত হয়েছিলাম। খবরটা ছিল, আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাওয়ায় কয়েকজন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। তখনই আমি এ ধরনের একটা ডিপার্টমেন্ট স্টোর দেওয়ার চিন্তাভাবনা করি। শেষমেশ দাব্বাগ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সহযোগিতায় আমার সেই চিন্তাভাবনাকে  সফলতার মুখ দেখাতে সমর্থ হই। যেহেতু আমাদের মূল ভাবনা ছিল ন্যায্য মূল্য প্রতিষ্ঠা করা, আমরা তাই-ই করে যাচ্ছি। ন্যায্য মূল্যের নির্ভেজাল পণ্য বিক্রিই আমাদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে বলে আমি মনে করি।

‘ন্যায্য মূল্যের শপ’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন ধরনের পণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন?

চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমাদের এখানে পাওয়া যায়। বিলাসীপণ্যের চেয়ে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহের দিকেই আমরা বেশি মনোযোগী থাকি। সুস্থভাবে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার, তার প্রায় সবই পাওয়া যায় আমাদের এ স্টোরে।

 

ভেজালহীন পণ্য সংগ্রহের উৎসগুলো কী?

প্যাকেট মসলার পাশাপাশি আমরা খোলা বাজার থেকে মসলা কিনে ভাঙাই। সেই পণ্য শতভাগ বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে গ্যারান্টি সহকারে বিক্রি করি। সুন্দরবনের মধু, গরুর খাঁটি দুধÑ এগুলো আমাদের নিজস্ব লোকের সাহায্যে সংগ্রহ করে বিক্রি করি।

 

নির্ভেজাল পণ্য নিশ্চিত করেন কীভাবে?

ভেজালের যুগে খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তা সত্যিই কঠিন কাজ। তারপরও ভালো মানুষ এখনো আছে। আমরা তাদের খোঁজেই আছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালোটাই পাচ্ছি। ক্রেতার মন্তব্য আর আমাদের প্রচেষ্টাই আপাতত নিশ্চয়তার মানদণ্ড।

 

কিছু পণ্য অবিক্রীত থেকে যায়। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ বা অবিক্রীত পণ্যগুলো কী করেন?

কোম্পানির পণ্য হলে অনেকেই বদলে দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ফেরত দেওয়ার পলিসি নেই। যেমন মিল্ক ভিটা দুধ রিটার্ন নেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের লোকসান হলেও কখনোই আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির চেষ্টা করি না। মেয়াদহীন অবিক্রীত পণ্য নষ্ট করে ফেলি।

 

এই যে ন্যায্য মূল্যে ব্যবসার জন্য চেষ্টা করছেন, এর প্রচার ও প্রসারের জন্য কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন?

এখন পর্যন্ত সেভাবে কিছু করতে পারিনি। আসলে তেমন কিছু করার সুযোগ পাইনি। আগামী মার্চ থেকে পুরোপুরি পাইকারিভাবে খুচরা ক্রেতার কাছে বিক্রির পরিকল্পনা আছে আমাদের। আমাদের নিয়মিত ক্রেতারাই প্রচার করছেন তাদের কথা শুনে অন্য ক্রেতারা এখানে আসেন। বলতে পারেন ক্রেতারাই আমাদের বিজ্ঞাপন।

আপনাদের ব্যবসার মৌলিকত্ব কোথায়?

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকে আমরা এ ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আজ এক বছর হতে চলল আমাদের দোকানের বয়স। আজো আমরা একে ব্যবসা হিসেবে নিইনি, এটা আমাদের সেবা খাত। সেবা আমাদের লক্ষ্য। মানুষকে ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়াই আমাদের ব্যবসার মৌলিকতা।

 

আপনাদের দৈনিক ক্রেতার সংখ্যা কেমন? নির্ভেজাল পণ্য সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া কী?

আমাদের ব্যবসা ভালোই চলছে। ক্রেতার সংখ্যাও সন্তোষজনক। ভালো ও নির্ভেজাল পণ্য পাওয়ার আশায় অনেকে দূর থেকে আসেন। কিছু কাস্টমার আছেন যারা দোকান বন্ধ থাকলেও অপেক্ষা করেন। এরকম অনেকবার হয়েছে। আমরা তাদের হতাশ করি না।

খেয়াল করে দেখবেন, আপনি আমি সবাই আসলে পরিবারের জন্য নির্ভেজাল পণ্যের খোঁজ করছি। কিন্তু না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাজারে যা পাওয়া যায় তা-ই কিনে খাচ্ছি। তাই ভালো পণ্য পেলে যে কেউ খুশি হবে। আমাদের সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্রেতার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। কাস্টমাররা আমাদের সাহস ও উৎসাহ জুগিয়েছেন।

 

আপনাদের ব্যবসা ক্রেতাদের কতটুকু আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

আস্থার বিষয়টা একটু মিশ্র। সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও আছে, এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। যেমন যেভাবে আমরা শুরু করেছিলাম সেটা ধরে রাখতে পারিনি। মাঝখানে দু’জন ম্যানেজার পরিবর্তন করতে হয়েছে। সৎ ও যোগ্য কর্মী নিয়ে কাজ করতে না পারলে আমাদের ব্যবসার মুখ্য উদ্দেশ্য নষ্ট হবে। মানুষ আস্থা হারাবে, যা আমরা কোনোভাবেই চাই না। নির্ভেজাল পণ্য সঠিক দামে প্রদান করে আমরা ক্রেতাদের যে আস্থা অর্জন করেছি, তা ধরে রাখতে চাই।

 

আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমাদের অনেক বড় বড় পরিকল্পনা আছে। আগামী মার্চ থেকে নতুন আঙ্গিকে ‘পাইকারি মূল্যে খুচরা বিক্রয়’এ স্লোগান নিয়ে নতুনরূপে আসব। মূলধন প্রয়োজন, তাই পরিকল্পনামাফিক ধীরে ধীরে এগোচ্ছি।

 

বিভিন্ন ব্যাংক এসএমই খাতে সহায়তা করে। আপনারা মূলধন বাড়াতে কোনো ব্যাংকের কাছে এ ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেন কি?

ব্যাপারটা উনারা যেভাবে প্রচার করে বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। এসএমই ব্যাংকিং এত সহজ নয়। ব্যাংকের লোন পেতে জামানত দিতে হয়, সেক্ষেত্রে লোন নেওয়া কার্যহীনতা হারায়, তাই না? তারা ব্যাংকের স্বার্থে প্রচার করেন। কথার সঙ্গে কাজের মিল খুব কমই পাওয়া যায়। তাই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করছি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের মোট লভ্যাংশের পরিমাণ দশ শতাংশের কম অথচ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ঠিক সমপরিমাণ ইন্টারেস্ট দিতে হয়। এভাবে চললে ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। তবে এ ধরনের ছোট শপ টিকিয়ে রাখতে সরকারেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। ট্যাক্সমুক্ত ঘোষণা দিতে পারে সরকার। না হলে উদ্যোক্তারা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাবেন।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০