বাজারের এ অবস্থার মূল কারণ ভালো মানের শেয়ারের অভাব। ভালো শেয়ার আনতে বাজারসংশ্লিষ্টরা ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে যেগুলো আনতে ব্যর্থ। এ বিষয়ে জোড়ালো উদ্যোগ নিতে হবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় আনতে হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ১৯টি কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কোম্পানিগুলো বাজারে আনা যায়নি। কোন শক্তিতে এ কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে না। তাহলে কী আমলাদের ক্ষমতা বেশি। এ আমলতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মোশতাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আহমেদ আল কবীর এবং এএপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
আহমেদ আল কবীর বলেন, বাজারে চলমান তারল্য সংকটের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮৫৬ কোটি টাকা দিয়েছে এবং বাজারে বিনিয়োগ বিষয়ে নমনীয় হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শিথিল করা হয়েছে বিনিয়োগ শর্ত। আবার পরিচালকরা বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না এবং যাদের দুই শতাংশ শেয়ার নেই তারা পরিচালক থাকতে পারবে না। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আসন্ন বাজেটে বাজারের জন্য প্রণোদনা থাকবে। এত কিছু করার পরেও বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাচ্ছে না এবং বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। বরং বাজার আরও তলানিতে যাচ্ছে। বাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়গুলো পুনরায় রিভিউ করা উচিত একটি স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বাজারে সম্পৃক্ত করতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চাহিদা কী এবং কেন তারা বাজারবিমুখ। এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। শুধু নিয়মনীতি পরিবর্তন করলেই হবে না। আবার বাজারের এ অবস্থার মূল কারণ হচ্ছে, ভালোমানের শেয়ারের অভাব। ভালো শেয়ার আনতে বাজারসংশ্লিষ্টরা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে সেগুলো আনতে ব্যর্থ। এখানে জোড়ালোভাবে উদ্যোগ নিতে হবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় আনতে হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ১৯টি কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কোম্পানিগুলো বাজারে আনা যায়নি। কোন শক্তিতে এ কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে না। তাহলে কী আমলাদের ক্ষমতা বেশি। এ আমলতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। হঠাৎ করে সরকার সিদ্ধান্ত নিল ব্যাংক ছয় শতাংশে ডিপোজিট সংগ্রহ করবে এবং ৯ শতাংশ ঋণ দেবে। কিন্তু সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এ সুবিধাটা দেওয়া ক্ষতিকর হয়েছে। আবার ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেটাও তারা সুযোগ নিচ্ছে। কথা হচ্ছে প্রাইভেট সেক্টর একটা দাবি করল আর সরকার সঙ্গে সঙ্গে সেটির অনুমোদন দিল। আসলে এটি ঠিক হয়নি। এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারকে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর বিশেষ করে এখনও ব্যাংকের ডিপোজিটর বেইজ অনেক ছোট। কত শতাংশ লোক ব্যাংকের আওতায় আসতে পারছে অর্থাৎ অন্য দেশের তুলনায় দেশের ব্যাংকে ডিপোজিটের সংখ্যা খুবই কম। ব্যাংকের ডিপোজিটরের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন দীর্ঘদিন ধরে বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে নেই। বাজার যখন একটা খারাপ অবস্থানে থাকে তখন বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাও বিবেচনা করা উচিত যে, যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে বাজারে দার্ঘস্থায়ীর ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন বাজারের আস্থার সংকট রয়েছে। যেখানে দেশের অর্থনীতির সব সূচকগুলো ইতিবাচক এবং অর্থনীতির গ্রোথ আট দশমিক ১৩ শতাংশ, সেখানে বাজার এ অবস্থায় থাকার কথা নয় বরং বাজার আরও ভালো থাকার কথা। আর বাজারসংশ্লিষ্ট যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য কতটা ভালো বা কার্যকর হবে সেটা ভাবা হচ্ছে না। যদি সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং সঠিক লক্ষ্যস্থির থাকা যায়, সেক্ষেত্রে বাজারকে ভালো একটা অবস্থানে দেখা যাবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ