Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:27 am

আমাদের আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে সরকারের আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘যদি এই আইনের (ভিসানীতি) কারণে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হয়, তা হবে আশীর্বাদ।’

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন এসব কথা বলেন। এর আগে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ আয়োজিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ: অ্যাডভান্সেস ইন হেলথ’ শীর্ষক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো আবেদন করবেন কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা যা করার দরকার, সেই ইনস্টিটিউশন ডেভেলপ করেছি। আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। সেখানে অন্য লোক সাহায্য করলে ভালো, না করলেও উই আর কমিটেড টু ইট।’

মার্কিন নতুন ভিসানীতির কারণে টাকা পাচার কমবে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘ভিসা (যুক্তরাষ্ট্রের) বড়লোকেরা নেয়। সরকারি কর্মচারী, কিছু বড় ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, রাজনীতিবিদÑতাদের ভিসার দরকার হয়, যাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়ে, বিদেশে বাড়ি বানিয়েছেন, যারা টাকা পাচার করেছেন। এতে হয়তো আশা করি টাকা পাচার কমবে। কারণ তারা নিয়ে গিয়ে তো স্থাপনা তৈরি করেন। আর যারা গরিব লোক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্ট হয়, তারা তো ভিসার জন্য আসেই না।’

ভিসানীতি নিয়ে সরকার মোটেই বিব্রত নয় বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিসা দেয়া-না দেয়া তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) ব্যাপার। ভিসা যুক্তরাষ্ট্র নিজের দায়িত্বে দেয়।

এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভিসা তাদের নিজের দায়িত্বে দেয়, এটি চলে আসছে। এতে প্রভাব পড়বে না। তবে আমি খুশি হব, তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চান, সেটিতেই সাহায্য করার জন্য তারা তাদের এই ভিসানীতি প্রচলন করেছে।’

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত। ৩ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসানীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইব এই ভিসানীতির আওতায় জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করো। কারণ জ্বালাও-পোড়াওয়ে যারা একবার জ্বলেছে, এখন জীবিত আছে, তাদের চেহারার দিকে তাকালে বড় দুঃখ পাবেন। আমরা আর জ্বালাও-পোড়াও চাই না।’

তিন হাজার ৮০০ যানবাহন পোড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি এই আইনের (ভিসানীতি) কারণে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হয়, তা হবে আশীর্বাদ। সুতরাং জ্বালাও-পোড়াও কারা করে? আপনারা জানেন। যারা করে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার। তাদের নেতৃত্বের সতর্ক হওয়া দরকার।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পূজারি। আমরা এ দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরাই গণতন্ত্রের মধ্যে সব সময় নির্বাচিত হয়েছি।’ দেশে জনগণের রায়ে সরকার নির্বাচিত না হলে টিকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

ঢাকায় নিযুক্ত ভারত ও সৌদি আরবের দূতদের বাড়তি নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, বাড়তি নিরাপত্তার জন্য কোনো রাষ্ট্রদূত এখন পর্যন্ত আবেদন করেননি। এছাড়া বিদেশি কোনো দেশ এমন অন্যায় কাজ করেনি যে তাদের ওপর হামলা হবে। দেশে নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।’

চীনের ভাইস মিনিস্টারের বাংলাদেশে আসা নিয়ে করা অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আসুক। আসবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সবাই আসবে।’