নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের সামনে বড় পরীক্ষা। আজকে ভয়াবহ দখলদারি, দানবীয়, অনির্বাচিত একটা সরকার জোর করে বসে আছে। এ দুঃসময়ে কৃষকদের সংগঠিত করে ভয়াবহ দানবীয় পাথরকে সরাতে হবে। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ বিপু মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিনিধি সভা উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, এ সরকার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছে। শুধু বিএনপি নয়, এদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আজকে শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। আওয়ামী লীগের ওপর কোনো আস্থা নেই। কারণ এরা এ দেশের মানুষের যে স্বপ্ন, যে আশা-আকাক্সক্ষা সব চুরমার করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা আগের রাতে ভোট চুরি করে নিয়ে যায়, যারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। আজকে তারা মিডিয়াকে করায়ত্ব করেছে। সাংবাদিকদের হাত-পা বাঁধা। সাংবাদিক কনক সারোয়ার জানের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আমেরিকায় একটি নিউজ পোর্টাল চালান। সেই অপরাধে তার অসহায় বোনকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সময় আসবে। বাংলাদেশের মানুষের সর্বনাশ করার জন্য এদেরকে জনগণ একদিন বিচার করবে। এদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তারা সংবিধানকে কেটে-ছিঁড়ে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশকে একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
এখন আওয়ামী লীগ কোথায়Ñপ্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমলা লীগ। যেখানে যাবেন, ডিসি-এসপি-ওসি এরাই হলো বড় সাহেব। আওয়ামী লীগের চাইতে তারা অনেক বড়। তারা নিজেরাই বলে, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। এ যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে এ জন্য শেখ হাসিনাকে-তার সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, অবশ্যই এ দেশে একটা নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণ তাদের মতামত দেবেন। সেই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, যাতে জনগণ তাদের ভোট যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষকদের সবচেয়ে বেশি করুণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। কৃষকদের এখন মেরুদণ্ড বলতে যেটা বোঝায় সেটা নেই। একদিকে ঋণে জর্জর, অন্যদিকে ফসলের দাম পায় না। ধান উৎপাদন করে কিন্তু সময়মতো ধানের দাম পায় না। পরে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি দামে বিক্রি করে। ফলে আজকে চালের দাম ৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আজকে প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়েছে। আজকে সকালে দেখলাম পেঁয়াজ ৮০ টাকা হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কৃষকরা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অংশ। তারাই সবচেয়ে বেশি। আপনাদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে, যাতে করে আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম যাতে পায়, সেটা আপনাদের দেখতে হবে। তাদের সঙ্গে থেকে আন্দোলন করতে হবে।
কৃষি আন্দোলন-কৃষকদের আন্দোলন ছাড়া কখনও সফল হওয়া যাবে নাÑউল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আজকে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি, এটা কখনোই সফল হবে না, যদি আমরা কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে না পারি। অর্থাৎ কৃষকদের জাগিয়ে তুলতে হবে।
কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেনÑসিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক টিএস আইউব, যুগ্ম সম্পাদক মোশারেফ হোসেন এমপি, দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।