নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণের সুদহার ক্যাপ না তুলে নীতি সুদহার বাড়িয়ে সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে এ নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদহার ২৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর ফলে রেপোর সুদহার বেড়ে হয়েছে ৬ শতাংশ। রিভার্স রেপোর ক্ষেত্রে নতুন সুদহার হবে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
গতকাল ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছেরের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাবাজার ও সুদহারের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি করা হয়েছে। আগামীতে এনপিএল (খেলাপি ঋণ) কমানো ও সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু উপকরণ ব্যবহার ছাড়া তেমন কোনো করণীয় নেই। যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান হলো টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতে কম হারে ঋণ দেয়া। এজন্য চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ প্রথমার্ধের মতো একই হার ধরে দ্বিতীয়ার্ধের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ আরও বাড়ানো হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর আগে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ শতাংশ। এছাড়া মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হয়েছে। অন্যদিকে নতুন মুদ্রানীতিতে আমানতের ওপর বেঁধে দেয়া সুদহার তুলে নেয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতের সুদহার নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে ভোক্তা ঋণের সুদহার।
মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমানতের সর্বনি¤œ সুদহার পুরোপুরি তুলে নেয়া হলো। এছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। ফলে ব্যাংকগুলো এখন ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়াতে পারবে। তবে শিল্পঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য ঋণের বেঁধে দেয়া সুদহার তুলে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমানতের সুদহার উš§ুক্ত করে দেয়া ও ঋণ সুদহারে কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে।
এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে আমানতের সর্বনি¤œ সুদহার বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, তিন মাস ও তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদ কোনোভাবে তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম হতে পারবে না। ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়ার পর আমানতের সুদহার আড়াই শতাংশেও নামিয়ে এনেছিল।