নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজার চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক চলুক, তা চান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। তারা মনে করেন, আমানত ও ঋণের সুদহারও বাজার ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সুদহার বেঁধে দেয়, তাহলে ব্যাংক পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি আমানতে সুদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, মেয়াদি আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতির সুদের হারের নিচে হতে পারবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশের মতো। অর্থাৎ আমানতের সুদের হারও হবে সাড়ে পাঁচ শতাংশ।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
গতকাল বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের নিয়ে ব্যাংকার্স সভায় এমডিরা সুদহার নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ঋণের সুদহার কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাত শতাংশও ঋণ দিতে হচ্ছে। এটা বাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। অন্যদিকে আমানতের সুদহার যদি সাড়ে পাঁচ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়, তাহলে তহবিল ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ব্যাংক চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। কারণ বেশিরভাগ ব্যাংকের ব্যক্তি আমানত ও মেয়াদি আমানত ৩০ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে এখন ব্যাংকগুলো মানুষের দোরগোড়ায় যাচ্ছে। ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং বা ক্ষুদ্র পর্যায়ে কার্যক্রম চালাতে ব্যাংকের খরচ এখন বেশি হচ্ছে। এজন্য আমানতে যদি সুদ বেশি দেয়া লাগে, তাহলে ব্যাংক লোকসান করবে। এমন পরিস্থিতিতে সুদহার নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন যাতে বাস্তবায়ন না করা লাগে, এমন আবদার করেছেন ব্যাংকগুলোর এমডিরা।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ আমানতই যখন ব্যক্তিপর্যায়ের তাহলে আমানতে সুদ কম দেয়া মানে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে স্পনসর বা ব্যাংক পরিচালকদের বেশি করে ডিভিডেন্ড দিয়ে তাদের লাভবান করা হচ্ছে, যেখানে পরিচালকরা ৩৫ ভাগ ডিভিডেন্ড পাচ্ছেন। সেখানে যদি সাধারণ আমানতকারীরা তিন শতাংশ পান, তাহলে সেটি তাদের সঙ্গে বৈষম্য ছাড়া আর কিছু নয়।
এমডিদের জোরাজুরির কারণে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এ বিষয়ে আরও কাজ করার আছে। সঞ্চয়পত্রের মতো সুদের হারের ক্ষেত্রে নানা ধাপ করা যায় কি না, সে বিষয়েও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে গতকালের সভায় এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
দীর্ঘদিন পর গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। বরাবরের মতো এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ব্যাংকার্স সভায় নিয়মিত কার্যবিবরণীতে নির্দেশনার আলোকে সব ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকার নিট মুনাফা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এর এক শতাংশ হিসেবে ১০৮ কোটি টাকা বিশেষ সিএসআর করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রণোদনার আওতায় বড় শিল্পে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সিএমএসএমই খাতে প্রথম বছর ১৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ১৬টি ব্যাংক ও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সভা থেকে প্রশংসাপত্র দেয়া হয়েছে। আর ৪০ শতাংশের কম বিতরণ করা ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিসের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংেকর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জনস্বার্থ দেখতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো চাইলে এটি সম্ভব। আমানতের সুদহার আমানতকারীদের দিতে হবে। এটি না হলে কভিডকালে মানুষের আয় কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবার বক্তব্য শুনেছে, সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।