Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:05 pm

আমানতে ভাটার টান আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও

শেখ আবু তালেব:ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) আমানতের বড় উৎস রাজধানীর বাসিন্দারা। সেই ঢাকা থেকে প্রাপ্ত আমানতের পরিমাণ কমেছে। কমেছে ফিক্সড ডিপোজিট বা মেয়াদি আমানতের পরিমাণও। একই সঙ্গে কমেছে এনবিএফআইয়ে রাখা সরকারের আমানত।

ফলে সার্বিকভাবে কমেছে দেশের এনবিএফআই খাতের আমানতের পরিমাণ। গত তিন মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ২৯০ কোটি টাকা। এদিকে আমানত কমলেও ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেনি। উল্টো বেড়েছে বিতরণ। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে তিন মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে দেড়গুণের বেশি।

গত ডিসেম্বর শেষে দেশের এনবিএফআইয়ে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। তিন মাস আগে গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৪২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ডিসেম্বর শেষে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ১৬১ কোটি টাকায়, গত সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৬৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৭৯৪ কোটি টাকা।

এটি যে পরিমাণ আমানত কমেছে তার চেয়ে দুই দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। প্রতিবেদন বলছে, এনবিএফআইয়ে থাকা আমানতের ৯৮ শতাংশের বেশি হচ্ছে মেয়াদীয় আমানত। সেই মেয়াদি আমানতে ভাটার টান পড়েছে। তিন মাস আগে মেয়াদি আমানতের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, গত সেপ্টম্বরে ঢাকা বিভাগের আমানত ছিল ৩৯ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে কমে হয়েছে ৩৯ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এই সময় বেড়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে। গত সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহ বিভাগের আমানত ছিল মাত্র ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বিভাগটির আমানত বেড়েছে ৬৯ শতাংশ বেশি। গত ডিসেম্বর শেষে হয়েছে ১৩৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ বিভাগের মতো আমানত প্রবৃদ্ধি এর আগে কখনও হয়নি। ছয় মাস আগে এ বিভাগ থেকে এনবিএফআই খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক খাতে ঋণসুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে দেশের আর্থিক খাতের সুদের হার কমতে থাকে। একদিকে সুদের হার কমে যাওয়া ও অন্যদিকে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় আর্থিক খাত থেকে আমানত কমতে শুরু করে।

এর সঙ্গে ডজন খানেক এনবিএফআইয়ের আর্থিক স্বাস্থ্যের ভঙ্গুর বিষয়টি সামনে চলে আসে। আমানত নিরাপদ করতে ব্যাংকগুলোও তহবিল তুলে নেয়া শুরু করে। এতে বিপাকে পড়ে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শেষ পর্যন্ত গণহারে এনবিএফআইগুলো থেকে আমানত তুলে নেয়া থেকে বিরত হতে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে আমানত সংকট মেটাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল এনে দিতে কমিশন দেয়া শুরু করে। করপোরেট আমানতে সর্বোচ্চ এক শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে। এটি তহবিল ব্যবস্থাপনায় খরচ হিসাবে দেখায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার অনেকে এটি পৃথক খরচে নিয়ে আসে। বিশেষত কয়েকটি ব্যবসায় উন্নয়ন খাতে দেখায়। কিন্তু বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এভাবে শ্যাডো ব্যাংকিং সংস্কৃতির প্রচলন আরও সম্প্রসারিত হয়।

এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে তহবিল চলে যায় বছর শেষে। করপোরেট এ তহবিল এক বছরের জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হয় সবাই। এতে নিয়ন্ত্রণ আনতে গত সপ্তাহে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ (ডিএফআইএম)। ফলে এখন থেকে আমানত আনতে কোনো প্রকার বাড়তি খরচ করতে পারবে না এনবিএফআইগুলো।

প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো প্রচলিত সব ধরনের আমানত সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদি ব্যতিরেকে অন্য কোনো আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের তহবিলের বড় অংশের উৎস ব্যাংক খাত। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয় ব্যবস্থাপনা ব্যাংকের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের এনবিএফআই, তফসিলবহির্ভূত ব্যাংক ও  কো-অপারেটিভ সোসাইটির কাছে গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১২১ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৩৪টি এনবিএফআইয়ের কাছে রয়েছে ৪২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। অন্যদিকে এই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।