Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 11:22 am

আমানত সংগ্রহের চাপে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দেড় হাজার কর্মকর্তা

পলাশ শরিফ: তিন মাসে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করতে চায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এ জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন ব্যাংকটির দায়িত্বশীলরা। এ জন্য বেসরকারি এ বাণিজ্যিক ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখার প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তাকে স্থায়ী আমানত সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পদভেদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর তা পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। আবার কম সুদে তহবিল সংগ্রহকে জোড় দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। বাড়ছে চাকরি হারানোর ভয়ও।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, নগদ অর্থের জোগান বাড়াতে আমানত সংগ্রহে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ৫৪১ কোটি ৭১ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করতে চায় ব্যাংকটি। এ জন্য বেশকিছু নতুন পণ্যও চালু করা হয়েছে। আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে প্রত্যোক শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

ওই চিঠিতে ব্যাংকটির শাখা পর্যায়ে এসইভিপি থেকে এভিপি পর্যন্ত ৯৮ জন কর্মকর্তাকে প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকা করে প্রায় ৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, এফএভিপি থেকে এসও পর্যায়ের ৫১০ জনকে প্রতি মাসে ১৪ লাখ টাকা করে প্রায় ২১৪ কোটি ২০ লাখ এবং অফিসার থেকে জেএও পর্যায়ের ৫৭০ জনকে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা করে প্রায় ১৭১ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে প্রধান কার্যালয়ের প্রায় ৩১৯ জন কর্মকর্তাকেও আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে তা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কম সুদে আমানত সংগ্রহকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এতে সফল হলে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে।

যদিও আমানত সংগ্রহের এ নির্দেশনাকে চাপ হিসেবে দেখছেন না স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মামুন-উর-রশিদ। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমানত সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা কর্মকর্তাদের জন্য বাড়তি চাপ নয়। ব্যাংকে সবাইকেই আমানত সংগ্রহে কাজ করতে হয়। আমি নিজেও রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি আমানত সংগ্রহে কাজ করি। এটি চলমান প্রক্রিয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে কোনো তারল্য সংকট নেই। আমরা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই আমানত সংগ্রহে ক্যাম্পেইন করছি। এক্ষেত্রে সুদের হার কম হওয়া অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের সে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আর ব্যাংকিংয়ে রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি সবাইকে গ্রাহকের কাছে যেতে হয়। এ জন্যই সবাইকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। যারা সফল হবে তাদের সেভাবে ইনসেনটিভসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। যারা ব্যর্থ হবে তাদের বিষয়েও চাকরি বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

যদিও ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা খুবই একটা ভালো নয় বলেই জানা গেছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি গত জুনে ছিল ৮৯ কোটি টাকা। তবে ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে ২৭৫ কোটি টাকা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছয় মাস আগের ৫০৫ কোটি টাকা থেকে ডিসেম্বর শেষে বেড়ে হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ঘাটতি পূরণে ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহে জোড় দিচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চলমান প্রতিযোগিতা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কম হওয়ার কারণে আমানত সংগ্রহের নির্দেশনাকে ‘বাড়তি চাপ’ বলে মনে করছেন ব্যাংকটির শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে এমন নির্দেশনায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। সে সঙ্গে নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতিসহ বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়া নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে। এমনকি চাকরি থাকা না থাকা নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সব সময়েই কর্মকর্তাদের চাপের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমানত সংগ্রহের জন্য নতুন নির্দেশনা অনেক বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো। এখানে লক্ষ্য পূরণ হলে ইনসেনটিভ দেওয়া কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু সুদের হার কম হওয়ার কারণে অধিকাংশ কর্মকর্তার পক্ষেই এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে পারফরম্যান্স খারাপ বলে গণ্য করা হবে। এতে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। চাকরি হারানোর ঝুঁকিও বাড়বে। তাই এ নির্দেশনা দেওয়ার আগে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।’

এদিকে গত পাঁচ বছরে কর-পরবর্তী মুনাফায় পিছিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। ২০১২ সালে প্রায় ১৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি, যা ২০১৬ সাল শেষে প্রায় ১০৮ কোটি ৮২ লাখ টাকায় নেমে আসে। ২০১৭ সালের শেষে তা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির প্রথম কয়েক বছর বাজারে এ কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা ছিল। কয়েক বছর পরই সেই চাহিদায় ভাটা পড়ে। ২০১০ সালের ধসের পর শেয়ারের দর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমেছিল। সার্বিক বাজার পরিস্থিতি ও লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পরে কোম্পানিটির শেয়ারদর কিছুটা বেড়েছে।