ষাটের দশকের শেষ দিকে রাজশাহীতে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করে আমান গ্রুপ। স্বাধীনতার পর আমান ট্রেডিং করপোরেশন নামে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত হতে থাকে। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে তারা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানির মাধ্যমে দেশে বিপণন শুরু করে। এতে ব্যবসার গতিপ্রকৃতি বদলে যায়। গ্রুপের প্রবৃদ্ধি ও পরিধি বাড়তে থাকে। একই বছরের মাঝামাঝি গ্রুপের ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আসে। কারণ ব্যবসার মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়া, সমৃদ্ধি অর্জন করা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবদান রাখা সহজ কাজ নয়। তাই আমান গ্রুপ বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করে। ব্যবসার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়ন তাদের মূল লক্ষ্য। এ পরিকল্পার অংশ হিসেবে প্রথমে কিছু কৃষিভিত্তিক শিল্পোন্নয়নের কাজ শুরু করে গ্রুপটি। এরপর ধাপে ধাপে কোল্ড স্টোরেজ, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নির্মাণ করে।
আমান গ্রুপ তাদের সেবা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো দেখাশোনার জন্য ২০০৪ সালে মতিঝিলে ছোট আকারে একটি অফিস নিয়ে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করে। আগে গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালিত হতো রাজশাহীর আঞ্চলিক অফিস থেকে। এরপর বাড়তে থাকে গ্রুপের কার্যক্রম ও ব্যবসা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে গ্রুপটির প্রধান করপোরেট অফিস স্থানান্তর করা হয় ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনে।
শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের মৌলিক চাহিদা পূরণে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হওয়া আমান গ্রুপের ভিশন।
মিশন হচ্ছে- সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি শ্রমবান্ধব শিল্পায়ন নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈড্ডার বাজার এলাকায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) নির্মাণ করবে আমান গ্রুপ। ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নামে ৯০ একর জমিতে সিমেন্ট, প্যাকেজিং, শিপইয়ার্ড, ফুড ও বেভারেজ, ইলেকট্রকিস, স্টিল ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন আরও বিস্তৃত করা হবে। এ শিল্পাঞ্চলে প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে আমান গ্রুপে সাড়ে ১৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান আছে। আমান গ্রুপ পরিচালিত সবগুলো প্রতিষ্ঠানই গ্রিন সার্টিফিকেট অর্জন করেছে।
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কর্মীদের জন্য আবাসিক সুবিধা দিয়ে থাকে আমান গ্রুপ। একই সঙ্গে কর্মীদের জন্য স্বল্পমূল্যে খাবারও সরবরাহ করে। নতুন ও পুরোনো কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কর্মীরা কেউ দুর্ভাগ্যবশত আহত হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
নামমাত্র মূলে স্বাস্থ্যসেবা তো আছেই। কোনো কর্মীর আকস্মিক মৃত্যু হলে পরিবারের যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরির দেওয়ার মাধ্যমে পুনর্বাসনে সহযোগিতা করে আমান গ্রুপ। কর্মরতদের সন্তান ও পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করে তারা। এর বাইরে আরও অংশগ্রহণমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য রয়েছে আমান ফাউন্ডেশন। এর প্রধান লক্ষ্য হলো, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষার্থীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে গ্রুপটি।
আমান গ্রুপে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. রফিকুল ইসলাম। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছেন মো. শফিকুল ইসলাম। পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন মো. তৌফিকুল ইসলাম ও মো. তরিকুল ইসলাম।
অঙ্গপ্রতিষ্ঠান
আমান টেক্স লিমিটেড
আমান টেক্স ইউনিট-২ লিমিটেড
আমান কটন ফাইবার্স লিমিটেড
আমান প্যাকেজিং অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড
আনওয়ারা মান্নান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড
জুভেনিল ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
আমান অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড
আমান ট্রেডিং করপোরেশন
ইসলাম ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং
আর এস অ্যান্ড টি ইন্টারন্যাশনাল
আমান সিমেন্ট মিলস লিমিটেড
আমান ফিড লিমিটেড
আমান চিকস লিমিটেড
আমান ব্রিডারস লিমিটেড
আমান সিমেন্ট মিলস ইউনিট-২ লিমিটেড
আমান পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড
আমান প্লান্ট টিসুকালচার লিমিটেড
আমান জুট ফাইবারস লিমিটেড
আমান কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড
আমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
মিলান কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড
এএম কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড
আমান সিডস স্টোরেজ লিমিটেড