আমার প্রাণের বর্ণমালা

কাজী সালমা সুলতানা: ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’Ñরক্তে রাঙানো ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু হলো আজ থেকে। এদিন থেকে ধ্বনিত হবে সেই অমর সংগীতের অমিয় বাণী। এদিনের স্পর্শ বায়ান্নর রক্তমাখা সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য সেদিন যারা শোষকদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের মনে করিয়ে দেয়।

এ মাস ত্যাগ ও অধিকার আদায়ের মাস। এ মাস একদিকে শোকাবহ, অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ আমরাই পৃথিবীর একমাত্র বাঙালি জাতি, যারা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছিল। বাঙালি জাতি ফেব্রæয়ারি মাসজুড়ে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের স্মরণ করবে।

ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রæয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উšে§ষ। পাকিস্তানি প্রভুরা পূর্ববাংলার সাংস্কৃতিক অবদমন ঘটাতে চেয়েছিল। তারই প্রতিক্রিয়া ও বিস্ফোরণরূপে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু এই সাংস্কৃতিক অবদমনের পেছনে মূল অভিসন্ধি ছিল অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক আধিপত্যবাদ।

ভাষা আন্দোলনের এ লড়াই থেকে শুরু হয়েছিল জাগ্রত জনতার বিরামহীন সংগ্রামের। রফিক, শফিক, জব্বারসহ অসংখ্য শহীদের বুকের তাজা রক্তে ঝরা এ মাস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মাস।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান অর্জন করে। আর এ মহান কাজে যারা অবদান রেখেছেন, তারা এ জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের স্বীকৃতির ফলে ভাষা শহীদরাও বিশ্বে বিরল সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ভাষা আন্দোলনের মাসজুড়ে অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে একুশের গ্রন্থমেলা শুরু হচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে উঠবে জমজমাট। বাংলা একাডেমিতে আগামীকাল ২ ফেব্রæয়ারি গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জাতীয় কবিতা উৎসবও শুরু হচ্ছে আগামীকাল। দুদিনব্যাপী এ উৎসব শেষ হবে ৩ ফেব্রæয়ারি। এ বছরের কবিতা উৎসবের মর্মবাণীÑ‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’। দুদিনের এ উৎসবে কবিতা পাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে এ সেøাগানকে মূর্ত করে তোলা হবে। নিবন্ধিত কবিদের কবিতা পাঠ, মুক্ত আলোচনা, আবৃত্তি, সেমিনার, ছড়াপাঠসহ সাজানো হয়েছে দুদিনের উৎসব। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মাসব্যাপী আয়োজন করেছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০