আমার প্রাণের বর্ণমালা

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা শহরের সব বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রী উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ পূর্ণ ধর্মঘট পালন করেন। বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজিউল হক। বক্তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ ও আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের প্রয়াস বন্ধের দাবি জানান। সভা শেষে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের বাসভবন হয়ে নবাবপুর রোড হয়ে নাজিমুদ্দিন রোড অতিক্রম করে। এ মিছিল থেকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে।

৪ ফেব্রুয়ারি শুধু ঢাকা শহরের বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু তা প্রদেশের সর্বত্র শোভাযাত্রা ও সংগঠনে রূপান্তরিত হয়। যশোর, নোয়াখালী, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সভা, শোভাযাত্রা থেকে একই সংকল্প ঘোষিত হয়। অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লায় সভা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। চাঁদপুরের স্কুল-কলেজগুলোয় ছাত্র, মজুর ও জনসাধারণ মিলিত হয়ে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করে। এছাড়া চট্টগ্রামে ৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কদিন ধরে ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘি ময়দানে ৪  ফেব্রুয়ারি যে জনসভা হয়, তাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বক্তৃতা করেন। সভায় এক প্রস্তাবে দাবি করা হয়, গণপরিষদের বাঙালি সদস্যরা যদি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করিয়ে নিতে না পারেন, তবে তারা যেন পদত্যাগ করেন।

এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বাংলা ভাষা ও বর্ণের অধিকার প্রদেশবাসীর হƒদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এই সুপ্ত আবেগের মহড়ায় স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তিই ভবিষ্যৎ আন্দোলনের ইঙ্গিত জানায়  ২১ ফেব্রুয়ারির আগমনী ঘোষণা করে।

এদিকে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের জরুরি অধিবেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে তার মোগলটুলির বাসভবনে পূর্ববঙ্গ কর্মশিবির অফিসে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেওয়ার কারণে পত্রিকাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। (সূত্র: আমাদের ভাষার লড়াই: বদরুদ্দীন উমর ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস: বশীর আল হেলাল)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০