আমার প্রাণের বর্ণমালা

কাজী সালমা সুলতানা: ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জš§ হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক দেখা দেয়। পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরাই পাকিস্তান সরকারে প্রাধান্য পায়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলতে থাকেন। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় গণআজাদী লীগ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সূত্রপাত ঘটে। এই সংগঠনের আহŸায়ক ছিলেন কমরুদ্দিন আহমেদ। গণআজাদী লীগের ঘোষণায় বলা হয়Ñ‘মাতৃভাষার সাহায্যে শিক্ষাদান করিতে হইবে। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাকে দেশের যুগোপযোগী করিবার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করিতে হইবে। বাংলা হইবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’

পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবি ওঠে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। ঢাকার ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহল ক্ষুব্ধ হয় এবং ভাষার বিষয়ে একটি চ‚ড়ান্ত দাবিনামা প্রস্তুত করা হয়। দাবিনামার মধ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা ও সরকারি কার্যাদি পরিচালনার মাধ্যম হবে বাংলা আর কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার ভাষা হবে দুটি বাংলা ও উর্দু।

ভাষার দাবিকে সামনে রেখে সর্বপ্রথম আন্দোলন সংঘটিত করে তমদ্দুন মজলিস। এর নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। অনেক প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক সংগঠন এ আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে। এক সময়ে ভাষার দাবিটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার জোর প্রচেষ্টা চালান। এ প্রচেষ্টার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ছাত্রসমাজ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রসভার আয়োজন করে। এ সভার পরও মিছিল-প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। তমদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক নূরুল হক ভ‚ঁইয়াকে আহŸায়ক করে ডিসেম্বরের শেষ দিকে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। পরের বছর ২৩ ফেব্রæয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বত্তৃদ্ধতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবের সংশোধনী এনে বাংলাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ছয় কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে চার কোটি ৪০ লাখই পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক। এই অধিকাংশ নাগরিকের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানসহ কেন্দ্রীয় নেতা এবং পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন বিরোধিতা করলে এ দাবি বাতিল হয়ে যায়। এ খবর ঢাকায় পৌঁছলে ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়ার তীব্র্র সমালোচনা করে। দৈনিক আজাদ পত্রিকাও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আনা প্রস্তাবের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে। এরপর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি নতুন রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদের আহŸায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০