কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টায় বিধান পরিষদের অধিবেশন শুরু হলে পূর্ববাংলার ২৩টি আসন শূন্য থাকে। পূর্ববঙ্গ পরিষদের মোট আসন ছিল ১৬৯টি। কৃষিমন্ত্রী হামিদুদ্দিন আহমেদ ২১ ও ২১ তারিখ দু’দিনই অনুপস্থিত ছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইনসাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী এদিন মোট ৩৫ সদস্য পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন। সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহ্বানে সমগ্র পূর্ববাংলার নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, বরিশাল, জামালপুরসহ বহু স্থানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ও আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক মোহাম্মদ সুলতানের বক্তব্য থেকে জানা যায় মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ফজলুল হক হল ও জগন্নাথ কলেজে ঘোষণা করা হয়, আগামীকাল ২২ ফেব্রুয়ারি সব গৃহে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। যেখানে বরকতের গুলি লেগেছিল, সেখান থেকে শহীদদের মৃতদেহ ও তাদের রক্তে রঞ্জিত পতাকাশোভিত মিছিল বের হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আরও বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও উত্তেজনায় বিচলিত হয়ে ওঠে। সেদিনও পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদের মধ্যে ৪৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিনও ১৪৪ ধারা অমান্য করার কর্মসূচি ছিল। সারা শহরকে আপাতদৃষ্টিতে একটি সামরিক ছাউনি বলে প্রতীয়মান হতে থাকে। এদিন শহরের সব দোকানপাট ও বাজারঘাট সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। অফিস-আদালত এমনকি সেক্রেটারিয়েট থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই কাজে যোগদান থেকে বিরত থেকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ভাষা আন্দোলনের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থেকে তারা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের যথাসাধ্যভাবে যুক্ত রাখেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি আগের দু’দিনের মতো হরতাল পালন করা হয়। এদিন ঢাকার রেলওয়ের কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করেন এবং অনেকে উপস্থিত থাকলেও কোনো কাজ করেননি। এদিন পূর্ববঙ্গ পরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রস্তাব গৃহীত হলেও বিয়োগব্যথায় ছাত্রদের মধ্যে তা কোনো উল্লাসের সঞ্চার করতে পারেনি। শহরে ১৪৪ ধারা থাকলেও হাজার হাজার মানুষকে এদিন রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। কালো ব্যাচ পড়ে শত শত মানুষ সলিমুল্লাহ হল প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি রোববার সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভায় সিদ্ধান্তমতো সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়।