কাজী সালমা সুলতানা: কিছুদিন পর পূর্ববাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে পূর্ববাংলা ভাষা কমিটি গঠন করা হয় এবং এ বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে; তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। প্রতিবেদনটিতে ভাষাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়, যেখানে তারা বাংলাকে আরবি অক্ষরের মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করেন।
এদিকে খাজা নাজিমুদ্দীন দলের অভ্যন্তরীণ চাপে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তা অস্বীকার করেন। ফলে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সরাসরি বিরোধিতা শুরু হয়। পূর্ববাংলার মানুষ তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেওয়ার দাবিতে নতুন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস রূপে পালিত হয়েছে। তারপরও বাংলা ভাষায় পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান রচনায় অচলাবস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা বিষয়েও কোনো মীমাংসা হয়নি। এদিকে ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান। পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর কায়েদে আজমও মৃত্যুবরণ করেন। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন খাজা নাজিমুদ্দীন ও নুরুল আমিন হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের ঢাকা অধিবেশনে খাজা নাজিমুদ্দীন ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট এবং বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটির উদ্যোগে পুরোনো কলা ভবন প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। ওই ধর্মঘট ও সভা থেকেই ভাষা আন্দোলনের শুরু। ১৯৪৮ সালেও ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের পরে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের অস্থায়ী সাংগঠনিক কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল মতিনকে আহবায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি গঠন করা হয়েছিল ১৯৪৯ সালের শেষদিকে। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীনের বাংলা ভাষা সম্পর্কিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ওই কমিটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং ওই কমিটির উদ্যোগে ৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।