কাজী সালমা সুলতানা: মূলত ১৯৪৭ সালে ৩১ আগস্টের আগে অনেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ও বিপক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু তখন আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রথমে মতামত দেন ব্রিটিশ লেখক ম্যাথানিয়েল ব্রাসি হলহেড। ১৭৭৮ সালে তিনি বাঙালিদের ইংরেজি শেখার জন্য ‘অ্যা গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাংগুয়েজ’ নামক বই প্রকাশ করেন।
এটাকে হলহেডের ব্যাকরণ বলা হয়। সে সময় উপমহাদেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল ফার্সি। হলহেড তার এই বইয়ের ভূমিকায় ফার্সির পরিবর্তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে তিনি যুক্তি দেনÑসরকারি কাজে বাংলাকে ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া হলে কোম্পানি সরকারের কাজকর্মের সুবিধা বাড়বে। এই পর্যন্ত পাওয়া ইতিহাস থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাব এটাই। রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক হিন্দিকে সাধারণ ভাষা করার প্রস্তাবের বিপক্ষে ড. মো. শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার দাবি পেশ করেন। ১৯১৮ সালে বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে এক সভায় ভারতের সাধারণ ভাষা কী হওয়া উচিতÑতা নিয়ে আলোচনা হয়। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দির পক্ষে মত দেন। সে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সভায় অংশগ্রহণকারী মো. শহীদুল্লাহ সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবি পেশ করেন (সূত্র-রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জি-প্রভাতকুমার)। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী কর্তৃক বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবে ১৯২১ সালে ওহাবী আন্দোলনে গোটা ভারতের মুসলমানরা ভারতের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার জন্য যখন ব্রিটিশ সরকারকে চাপ দিচ্ছিল, তখন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী লিখিতভাবে ব্রিটিশ সরকারকে জানান, ভারতের রাষ্ট্রভাষা যাই হোক না কেন, বাংলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা করতে হবে। (সূত্র-আবু মোহাম্মদ মোতাহার, লিখিত বাংলা ভাষা)
বাংলা রাষ্ট্রভাষার প্রথম প্রস্তাবক নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী-(সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক ৪ ফেব্রুয়ারি-১৯৮৮) দৈনিক আজাদের সম্পাদকীয়তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব ২৩ এপ্রিল, ১৯৩৭। এদিন প্রকাশিত দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সাহিত্যের দিক দিয়ে বাংলাভাষা ভারতের সব প্রাদেশিক সাহিত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাংলা ভাষায় ভাব প্রকাশ উপযোগী শব্দের সংখ্যাও বেশি। অতএব বাংলা সবদিক দিয়েই ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করতে পারে। রাষ্ট্রভাষা নির্বাচনে হিন্দি-উর্দুর সমর্থকদের মধ্যে আজ যে তুমুল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ উপস্থিত হয়েছে তার ফলে হয়তো উর্দু ও হিন্দির মধ্যে কোনোটারই রাষ্ট্রভাষার আপন অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হবে না।