শেয়ার বিজ ডেস্ক: কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন ইউনাইটেড আরব আমিরাতে (ইউএই) আয়োজনের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন জলবায়ুবিষয়ক আইনজীবী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (এডিএনওসি) সিইও সুলতান আল জাবেরকে সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে নিয়োগের সমালোচনা করেন গোর। খবর: সিএনএন।
গোর সিএনএনকে বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও সবচেয়ে কম দায়িত্বশীল তেল কোম্পানির সিইওকে সম্মেলনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সিএনএন মন্তব্যের জন্য এডিএনওসির সিইও সুলতান আল জাবেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা প্রয়োজন-এমন দাবির ‘কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি’ নেই বলে গত ২১ নভেম্বর অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন আমিরাতের শিল্প ও আধুনিক প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী সুলতান আল-জাবের।
একই দিন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে বৈশ্বিক পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়ছে সে বিষয়ে জোর দেন আল গোর। তিনি বলেন, আমি মনে করি, বেশিরভাগ দেশ যদি তাদের বিশ্বাস ধরে রাখে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধের দাবি জানায়, তাহলে আমরা এখানে আশ্চর্যজনক ভালো ফল দেখতে পাব। আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি।
গত সপ্তাহে এসব মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর আল জাবের জলবায়ু বিজ্ঞানের প্রতি তার অঙ্গীকারকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন এবং বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করা অনিবার্য ও অপরিহার্য।
যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু দূত জন কেরি বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে আল জাবেরের সিওপি সভাপতিত্বকে সমর্থন করেছেন, কিন্তু গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এতে অংশ নেননি।
কপ-এর প্রথম পর্যায় বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে এবং দেশগুলো এখন বার্ষিক জলবায়ু আলোচনায় প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ফেজআউট সম্পর্কে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি। ১০০টির বেশি দেশ কোনো না কোনো রূপে ফেজআউটকে সমর্থন করে, তবে কিছু তেল উৎপাদনকারী দেশ তেল এবং গ্যাস হ্রাস করার কোনো নীতি মানতে চায় না।
গত রোববার প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সম্মেলনে দূষণ কমানোর অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও বিশ্ব এখনও বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পথে নেই।
সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিল্পায়নের আগে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের তাপমাত্রাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য যা প্রয়োজন তা অর্জনের জন্য এই প্রতিশ্রুতিগুলো যথেষ্ট হবে না।
গতকাল মঙ্গলবার এই সম্মেলনের পর্দা নামার কথা। তার আগে সোমবার জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে দুর্বল একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশের তুমুল সমালোচনার মধ্যে মঞ্চে বিক্ষোভের ঝড় তোলে ১২ বছরের এক কিশোরী। মাথার ওপরে একটি ব্যানার ধরে আচমকা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ভারতীয় কিশোরী জলবায়ুকর্মী লিসিপ্রিয়া কাংগুজাম। তার ব্যানারে লেখা ছিল, শেষ হোক জীবাশ্ম জ্বালানি। রক্ষা পাক আমাদের পৃথিবী, আমাদের ভবিষ্যৎ।
দর্শকশ্রোতাদের করতালির মধ্যে পরে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়। সম্মেলনের মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত মজিদ আল সুয়াইদি কিশোরী লিসিপ্রিয়ার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কপ২৮ সম্মেলনে অল্পবয়সীদের এমন উদ্যমের প্রশংসা করেন। লিসিপ্রিয়ার জন্য আরেকবার হাততালি দিতে দর্শকশ্রোতাদের অনুরোধও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত এবারের সম্মেলনে নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক সংগঠিত গোষ্ঠী এমনকি অনেক রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক ইউনিয়নও। কেননা জলবায়ু আলোচনায় এবার বিক্ষোভের ওপর কড়াকড়ি ছিল।