কাজী ফার্মস গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। শুরুতে বিশ্বের নানা দেশ থেকে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতো প্রতিষ্ঠানটি। তবে পরের বছরই সে চিত্র পাল্টে যায়। নিজস্ব কারখানায় ডিম উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ২০০৪ সালে ডিম ও একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা রফতানি শুরু করে কাজী ফার্মস। সে একই বছর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান ডেইলি স্টার-ডিএইচএল বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ‘বিজনেসম্যান অব দ্য ইয়ার’ অর্জন করেন।
শুরু থেকেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আমিষের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে কাজী ফার্মস গ্রুপ। বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় পোলট্রি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠান।
ডিম, পোলট্রি ফিড, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি উৎপাদন এবং সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কাজী ফুডের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে আরো রয়েছে আইসক্রিম ব্র্যান্ড বেলিসিমো ও জানজি। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য উৎপাদন করে কাজী ফার্মস কিচেন। এর মধ্যে আলুপুরি, ডালপুরি, সসেজ, নাগেটস, কাটলেট, বার্গার পেটি, পরোটা, মিট বলস, ড্রামস্টিকস অন্যতম। তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্রয়লারব্রিড ‘কব ৫০০’ ব্র্যান্ডের উৎপাদক। কব ভ্যানট্রেসের সহযোগিতায় ‘কাজী কব ৫০০’ নামে ব্রয়লার বিক্রি করছে। কারগিল ইউএসএ ও বুহলার সুইজারল্যান্ডের কারিগরি সহায়তায় পোলট্রি ফিড কারখানা স্থাপন করেছে কাজী ফার্মস। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় রয়েছে তাদের ফিড মিল।
কাজী ফার্মস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী কাজী জাহেদুল হাসান। বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন বিভাগেও শিক্ষক ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে স্থপতি হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস ও রয়েল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টসের সদস্য। তার সঙ্গে কাজী ফার্মস গ্রুপের দেখভাল করছেন সহধর্মিণী ড. পারভীন হাসান ও দুই ছেলে।
ভারতের রাজধানীতে কয়েকটি হ্যাচারি পরিদর্শনের পর দেশে গড়ে তোলেন পোলট্রি ব্যবসা। প্রসঙ্গত কাজী ফ্যাশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতাও কাজী জাহেদুল হাসান। সেখানে ২০ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পোলট্রি ব্যবসায় মনোযোগ বাড়াতে ২০০২ সালে কাজী ফ্যাশন লিমিটেড বিক্রি করে দেন।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা বয়সী মুরগির বাচ্চা আলাদা আলাদা রাখছে কাজী ফার্মস। পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাহেদুল ইসলাম। এছাড়া নিজ উদ্যোগে দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তাদের ১২টি হ্যাচারি ও ১৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। রয়েছে দুটি ফিড মিল।
গণমাধ্যম খাতেও বিনিয়োগ করেছে কাজী ফার্মস গ্রুপ। তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে কাজী মিডিয়া লিমিটেড। এ কোম্পানি পরিচালনা করছে টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভি। এছাড়া সিসনোভা ইনফরমেশন সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে। ওপেন সোর্স ইআরপি চালু রয়েছে সিসনোভা সিস্টেমে। এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে তার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র উন্নত ও গতিশীল করতে পারে। ব্যবসাবান্ধব সফটওয়্যার সরবরাহ করে সিসনোভা সিস্টেমস।
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে কাজী ফার্মস। রাজধানীর সেন্ট্রাল ওমেন্স ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেছে তাদের অর্থায়নে। এটি নারীদের জন্য দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গোপালগঞ্জ শহরে মেরি গোপীনাথপুরে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে কাজী জহুরুল হক কলেজ। এটি সম্পূর্ণ অবৈতনিক।