আমেরিকানদের বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে বিদেশি প্রতারকরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশি প্রতারক চক্র প্রতি বছর আমেরিকানদের কাছ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মতো প্রযুক্তি দিয়ে জালিয়াতি করার কারণে এই অপরাধের মাত্রা দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এএআরপির ফ্রড ওয়াচ নেটওয়ার্কের জালিয়াতি প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক ক্যাথি স্টোকস বলেন, ইন্টারনেট ও টেলিফোনে জালিয়াতি ‘ব্যাপকভাবে’ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর: এবিসি নিউজ।

প্রতারকরা নানারকম পন্থা অবলম্বন করে ভুক্তভোগীদের সারাজীবনের সঞ্চয় হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে সাধারণ কিছু উপায় হচ্ছে, নারীদের দিয়ে প্রলুব্ধ করে, বয়স্ক ব্যক্তিদের বোকা বানিয়ে বা প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করা। একবার প্রতারকরা অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর সাধারণত ভুক্তভোগীরা আর তাদের অর্থ ফেরত পান না।

সম্প্রতি ওহাইও রাজ্যে ৮১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে প্রতারকরা লক্ষ্যবস্তু করে। বাড়ির মালিক উইলিয়াম ব্রক এক উবার চালককে প্রতারক ভেবে গুলি করে হত্যা করেন। তবে পরবর্তী সময়ে সেই উবার চালকও প্রতারণার শিকার হন বলে প্রমাণিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেটন ও কলম্বাসের মাঝামাঝি স্থান থেকে পার্সেল ডেলিভারি করার জন্য প্রতারক উবারের মতো প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিলেন, যেখানে চালক কিছুই আঁচ করতে পারেননি এবং সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন।

বাড়ির মালিক উইলিয়াম ব্রকের বিরুদ্ধে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল, তবে যে প্রতারক ব্রককে ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন এবং ঘটনাগুলো সাজিয়েছিলেন তিনি তিন মাসের বেশি সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ব্রক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তিনি তার জীবন নিয়ে ভয়ে ছিলেন।
অনলাইন ও টেলিফোনে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা এতটাই সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা পরিষেবাগুলো তা বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রবীণদের সঙ্গে হওয়া জালিয়াতির তদন্তের তত্ত্বাবধানকারী সাবেক এফবিআই এজেন্ট ব্র্যাডি ফিনটা বলেন, অপরাধগুলো আমাদের জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ছে যে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। চুরি হওয়া অর্থ দ্রুত বাইরের দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তরিত হওয়ায় তা উদ্ধার করা যায় না। এছাড়া প্রতারণার অর্থ দ্রুত বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোয় পাচার করা হয়।

সান দিয়েগোয় ২২ বছর ধরে প্রবীণদের সঙ্গে হওয়া আর্থিক জালিয়াতির মামলা পরিচালনা করছেন পল গ্রিনউড। তার মতে, কিছু পুলিশ ডিপার্টমেন্ট অন্যান্য অপরাধে ক্ষতিগ্রস্তদের মতো আর্থিক প্রতারণার বিষয়গুলো গুরুত্বসহ নেয় না। গ্রিনউড বলেন, অনেক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে, যারা মনে করে, যেহেতু ভুক্তভোগীরা গিফট কার্ডের মাধ্যমে বা ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে ক্রিপ্টো কেনার জন্য স্বেচ্ছায় অর্থ দিচ্ছেন, তাই লেনদেনগুলো তাদের সম্মতিতেই হচ্ছে। এটি একটি বড় ভুল, কারণ ব্যপারটা এমন নয়। এখানে ভুক্তভোগীর সম্মতি থাকে না। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়।

২০২৩ সালের এএআরপি সমীক্ষায় হিসাব করা হয়েছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণরা প্রতি বছর জালিয়াতির কারণে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার হারান। ফেডারেল ট্রেড কমিশন অনুমান করছে, প্রতারকরা ২০২২ সালে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার চুরি করেছে, যার মধ্যে বয়স্কদের কাছ থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলার চুরি করেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেয়া এক বিবৃতিতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বলেছে, প্রযুক্তি, ব্যাংকিং, ফিনটেক এবং টেলিযোগাযোগ খাতসহ বেসরকারি খাতকে অবশ্যই প্রতারকদের প্রতারণার হাত থেকে ভুক্তভোগীদের রক্ষা করতে আয়-ব্যয়ের হিসাব কঠিন করে তুলতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা যাতে সহজে পাচার করা না যায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ব্যাংক খাতের কর্মকর্তারা মে মাসে সিনেটের একটি উপকমিটিকে বলেছিলেন, তারা জালিয়াতি বন্ধ করতে নতুন প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছেন এবং তা কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০