আমের ফুল-ফল ঝরা রোধের উপায়

সুস্বাদু ফলের মধ্যে আম অন্যতম। এর ঘ্রাণ ও স্বাদ অতুলনীয়। তাইতো বলা হয়: ফলের রাজা আম। এখন মাঘের মাঝামাঝি চলছে। এ সময় থেকেই আমের মুকুল আসা শুরু হয়। দেখা যায়, গাছে মুকুল এলেও সব গাছে ফল ধরে না বা কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। ফলে আম উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

আম গাছে সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় সার, সেচ, পোকামাকড়-রোগবালাই ব্যবস্থাপনা না করায় ফুল ও ফল ঝরে যায়। এতে সামগ্রিকভাবে আমের উৎপাদন ব্যাহত হয়। কিছু উপায় অবলম্বন করে আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধ করা যায়। উপায়গুলো জেনে নিতে পারেন:

স        ফল সংগ্রহের পর রোগাক্রান্ত মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখা-প্রশাখা ছেঁটে গাছে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে

স        ফল সংগ্রহ শেষে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিয়ম মেনে সার দিতে হবে। প্রয়োজনমতো গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও বরিক এসিড দিতে হবে

স        মুকুল আসার পর এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে যে কোনো পোকা দমনের জন্য কৃষি দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। শুধু কীটনাশকই নয়, পাশাপাশি ছত্রাকনাশক ওষুধ পানিতে এক সঙ্গে মিশিয়ে মুকুল, পাতা, শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে। এরপর চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে আম মটরদানা আকৃতির হলে একই ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে মুকুল, পাতা, কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখায় স্প্র্রে করতে হবে। এছাড়া ফুল আসার আগেও একবার স্প্রে করা আবশ্যক

স        মাটিতে রসের অভাবে আমের মুকুল ঝরে যায়। তাই এ সময় গাছের চার পাশে সকালে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানা হওয়ার পরও গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ দেওয়া উত্তম। অর্থাৎ, আমগাছে ভরা মুকুলের সময় থেকে শুরু করে ১৫ দিন অন্তর গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি আরও একটি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়

স        ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক এসিড প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলেও আমের গুটি ঝরা কমে যায়। এছাড়া প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ দিন অন্তর ১০ লিটার পানিতে ছয় গ্রাম করে বরিক এসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়

স        এ সময় স্প্রে ছাড়াও গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে। গাছের গোড়ার চারদিকে কমপক্ষে এক থেকে এক দশমিক পাঁচ মিটার দূরে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সার দিতে হবে। গাছের বয়স বেশি হলে এর দূরত্ব বাড়াতে পারেন। সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিতে হবে

সতর্কতা

গাছে মুকুল আসার আগে ও পরে স্প্রে করতে হবে। কিন্তু মুকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই স্প্রে করা ঠিক হবে না। কেননা, এ সময় কিছু উপকারী পোকা আমবাগানে আসে, পরাগায়নে সহযোগিতা করে। সঠিকভাবে দুবার স্প্রে করতে পারলে গাছে অনেক আম থাকবে। পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নিতে ফল কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি ও গুটি বড় হয়ে ফলে রূপ নেয়। সব পর্যায়ে গাছের বালাই ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে মুকুল আসার আগে ও পরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা, মুকুল ঝরে পড়লেই আম উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।

হ কৃষি-কৃষ্টি ডেস্ক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০