দেশজুড়ে রংপুরের সুস্বাদু লিচু ও আমের জুড়ি মেলা ভার। লিচু ও আমবাগানে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে এখন মধু আহরণে ব্যস্ত মৌচাষিরা। এতে একদিকে যেমন তারা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটিয়ে আম ও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছেন। ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি মধুচাষিরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে আম ও লিচুর বড় বাগান। এসব ফলবাগান হতে প্রতি বছর মধু চাষ করে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন চাষি। রংপুর জেলা মৌচাষি কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, আম ও লিচুবাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। রংপুরে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মৌচাষি রয়েছেন। তারা বিভিন্ন জেলায় ফলদ ও বনজ বাগানসহ শস্যক্ষেতে মধু চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত মধু এপি, ডাবরসহ বিভিন্ন কোম্পানি কিনে নিয়ে যায়। তবে স্থানীয়দের মাঝে বিক্রি করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা।
রংপুরের বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও তারাগঞ্জের বিভিন্ন বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এবার লিচু ও আমের মুকুল যেভাবে ফুটেছে, তাতে প্রায় ১০০ মণ মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রংপুর টাউন হল চত্বরে মধু বিক্রি করতে আসা জামাল ও সামছুল বলেন, এখন লিচুর মধু বেশি পাওয়া যাচ্ছে। লিচু ও আমের ফুলের সময় হলেও মৌমাছি লিচুর মুকুল থেকে বেশি মধু সংগ্রহ করে। তারা জানান, প্রতি কেজি মধু ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছি। রংপুর বিভাগের মৌচাষি কল্যাণ সমিতির এক নারী সদস্য সান্ত¡না আনোয়ার জানান, বাগান মালিকদের আহ্বানে আমরা প্রায় ৪৫টি দলে বিভক্ত হয়ে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন বাগানে মধু সংগ্রহে বের হই। ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর সব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করি। তিনি আরও জানান, আমরা একদিকে মধু সংগ্রহ করি, অপরদিকে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে নতুন রানি উৎপাদন করি। সরকার যদি মধু চাষে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদানে ব্যাপক প্রচার চালায়, তাহলে কয়েকশ টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যাবে। বদরগঞ্জ এলাকার মধুচাষি লুৎফর রহমান জানান, আমাদের দেশের মধু ভারতীয় কোম্পানিগুলো সস্তায় অন্য দেশে রফতানি করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সম্ভাবনাময় এই মধু চাষ খাতে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। মধু চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসত, তেমনি দূর হতো বেকার সমস্যা।
নুর আলম