এমসিসিআই, ডিসিসিআই ও বিউআইএলডির যৌথ বিবৃতি

আয়কর অধ্যাদেশ ও ভ্যাট আইনের নতুন ধারা বাতিল করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার নিমিত্তে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ভ্যাট আইন ২০১২ এবং আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এ সংযোজনকৃত কয়েকটি নতুন ধারা বাতিল চায় ব্যবসায়ীদের কয়েকটি সংগঠন। গতকাল সোমবার এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে,  মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বিসনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিউআইএলডি) নেতারা।

যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি, তথা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কভিড-১৯ মহামারির প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের কাছে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজেট হিসেবে বিবেচিত হবে। দেশের বাইরে, কভিড-১৯ এর কারণে সরবরাহ-অভিগাতের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে বৈশ্বিক ভ্যালু চেইন এর বৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে প্রায় ৩৫ শতাংশ। সত্যিকার অর্থে, বিশ্ব-বাণিজ্য বৈশ্বিক জিডিপির চেয়ে অধিক হারে আর বাড়ছে না।

বিশ্বব্যাপী করপোরেট প্রতিষ্ঠাগুলোর ক্রমহ্রাসমান উৎপাদনের কারণে এমন এক মন্দা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, যা আগে কখন দেখা যায়নি। আগামী বছরের জন্য আইএমএফ, ইসিডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে ভি-শেপ রিকভারির প্রত্যাশা করেছিল, যা বোধহয় ২০০৮-১০ সালের মহামন্দা থেকে দ্রুত উত্তরণের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। তবে সেই মহামন্দা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কারণে হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী প্রকৃত অর্থনীতির সংকটের কারণে উদ্ভূত হয়নি।

বর্তমান মন্দায় সরবরাহ-শৃঙ্খলগুলো ভেঙে পড়ার কারণে এর অভিঘাত আগের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলবে না। ও ইসিডি দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হচ্ছে।

তারা বলেন, ৬৬ দিনের সাধারণ কর্মবিরতির পর বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায় ৩০-৯০ শতাংশ বিক্রয় কমে গেছে; তারা শুধু কোনো রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। অধিকাংশ ক্রেতাই আয় কমে যাওয়া, কর্মহীন হয়ে পড়া, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থেকে ব্যয় সংকোচন করে শুধ খাদ্য এবং ওষুধের মতো অত্যাবশ্যক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে ব্যয় সীমিত রেখেছে।

গৃহনির্মাণ থেকে গণপরিবহন থেকে টেলিযোগাযোগ সব খাতেই চাহিদায় ধস নেমেছে। এমতাবস্থায় যা প্রয়োজন তা হলো স্থানীয় চাহিদা বৃদ্ধি করে দেশীয় অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করা। বাজেটের মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতির সব খাতে অর্থ সঞ্চালন করা এবং নীতি সহায়তামূলক পদক্ষেপ নেওয়াটাই এখন অবশ্যপ্রয়োজন। যতগুলো খাতে সম্ভব চাহিদা ও সরবরাহে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। এটা অনুধাবন করেই প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রণোদনা ঘোষণা করে এটি ইতিবাচক সহায়ক আবহাওয়া সৃষ্টি করেন।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, কভিড-১৯ মহামারি নীতিনির্ধারকদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ দাঁড় করিয়েছে। তা সত্ত্বেও এর থেকে উত্তরণের জন্য গতানুগতিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কোনো অসাধু ব্যক্তি কোনো নীতিসহায়তার অপব্যাবহার করবেÑএ ভয় পরিত্যাগ করে প্রয়োজনীয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে, এ বছরের অর্থবিল পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এবং ভ্যাট আইন ২০১২ তে কিছু নতুন ধারা সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে যা শুধু এই কভিড-১৯ মহামারি প্রসূত দুঃসহ সময়েই নয়, সাধারণভাবেই ব্যবসায় পরিচালনায় জটিলতা বাড়াবে ও ব্যয়বৃদ্ধির কারণ হবে; একই সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে না বরং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও জটিলতার সৃষ্টি করবে। তাই বাজেটে প্রস্তাবিত ধারাগুলো বাতিলের দাবি করছি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে সমগ্র অর্থনীতি সামনে মহামন্দা’র আশঙ্কা করছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের কল্যাণে অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য একের পর এক সুচিন্তিত ও প্রাজ্ঞ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, এবং বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে ব্যবসা ও উৎপাদন চলমান রাখার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রণোদনা ও সহায়তা ঘোষণা করেছেন, যার জন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। এমতাবস্থায়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এবং ভ্যাট আইন ২০১২-এর এ প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো ব্যবসাবান্ধব বা রাজস্ববান্ধব, কোনোটাই নয়, বরং অর্থনীতিতে গতিসঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করবে।

সরকারের প্রতি নিবেদন, উল্লিখিত প্রতিটি ধারা সম্বন্ধে আমাদের যুক্তি অনুধাবন করে দেশের এবং অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে উক্ত পরিবর্তনগুলো যেন আইনে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়। আমাদের নিবেদনে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা ও সিদ্ধান্ত আমাদের বাধিত করবে, এবং দেশের অর্থনীতির উত্তরণের গতি ত্বরান্বিত করবে।

মূল্য সংযোজন কর আইন ২০১২ এতে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরনের শতাধিক কাঁচামাল ব্যবহারের পূর্বাপর বিবরণ সংরক্ষণ করা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশাল জটিলতা সৃষ্টি করবে।

ব্যবসায়ীরা একই পরিমাণ রেয়াত দাবি করায় এনবিআরের রাজস্ব আহরণে কোনো সুবিধা নেই। শুধু এক মাসের পরিবর্তে এনবিআর চার মাস সময় পাবে এ অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য; এবং অধিকতর তিন মাস সময় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ অর্থ ব্যবহার করার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, যাতে তার উৎপাদন ব্যয় অনাকাক্সিক্ষতভাবে বৃদ্ধি পাবে। উপরোক্ত কারণে আমরা এ প্রস্তাবিত বিধান আইনে সংযোজন না করার অনুরোধ করছি।

আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এতে টার্নওভারের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদনযোগ্য বিজ্ঞাপন ব্যয়ের ওপর বাধা-নিষেধ রয়েছে। এটি ব্যবসার একটি যৌক্তিক এবং আইনসঙ্গত ব্যয়। এটার ওপর বাধা-নিষেধ বা সীমা আরোপ কেন করা হবে? আমরা এ বিধান বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০