আয়োডিন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা খনিজ পুষ্টি উপাদান। আমাদের শরীরে থাইরক্সিন হরমোন তৈরির কাঁচামাল এই আয়োডিন। থাইরক্সিন হরমোন মানুষের বিকাশ, বৃদ্ধি ও বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষকেরা বলেন, গর্ভাবস্থার তিন থেকে পাঁচ মাস সময়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের থাইরক্সিনের অভাব হলে গর্ভস্থ শিশু সঠিক পরিমাণ থাইরক্সিন পায় না। ফলে শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশে বিপর্যয় দেখা দেয়। এমনকি জš§ নেয়া শিশুটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পর্যন্ত হতে পারে। জš§গতভাবে আয়োডিন বা থাইরয়েড হরমোনের অভাবে ক্রিটিনিজম বা বৃদ্ধি প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়ার ঝুঁকি থাকে।
আয়োডিনের অভাবে আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ন্ত শিশুর চিন্তাশক্তি ও মেধার স্বাভাবিক বিকাশ। গর্ভাবস্থায় শিশুমৃত্যু বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। শিশুর দৈহিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিশুর মধ্যে পরবর্তী সময়ে বামন ও বধির হওয়ার মতো স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে। যে নারীদের আয়োডিন ঘাটতি আছে, তাদের মধ্যে গর্ভপাত ও মৃত শিশুর জš§দানের হার বেশি। আয়োডিনের অভাবগ্রস্ত শিশুরা অন্যদের চেয়ে বেশি অপুষ্টি সমস্যায় ভোগে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।
যে কারও আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের সর্বত্রই খাদ্যে আয়োডিনের কম-বেশি ঘাটতি রয়েছে। আয়োডিনযুক্ত লবণে কতটা আয়োডিন আছে, তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে।
আয়োডিন প্রাকৃতিকভাবে মাটি ও পানিতে পাওয়া যায়। যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদ এই মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, তাদের আয়োডিনের চাহিদা এমনিতেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ও বন্যার ফলে মাটি থেকে এই আয়োডিন ধুয়ে চলে যায়, ফলে আমাদের খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি থেকে যায়। আয়োডিনের ঘাটতি কাটাতে খাদ্যে বাড়তি আয়োডিন নিতে হবে। এর সহজ সমাধান হচ্ছে আয়োডিনযুক্ত লবণ গ্রহণ। সামুদ্রিক মাছ, মাছের যকৃতের তেল, যেমন কডলিভার তেল, হেলিবার্ড লিভার তেল, শার্ক লিভার তেল, শামুক, সামুদ্রিক উদ্ভিদ এবং ছাগলের দুধে আয়োডিন পাওয়া যায়। আয়োডিন দেহে বেশি পরিমাণে সংরক্ষণ করা যায় না। তাই নিয়মিত ও পরিমাণমতো আয়োডিন গ্রহণ করতে হবে।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন হলেই চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিডনির আয়োডিন নিষ্কাশন করার ক্ষমতা বেশি, ফলে গৃহীত আয়োডিনের ৮০ শতাংশই প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তাই বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো মানুষের প্রায় ৫০০ মাইক্রোগ্রাম বা পাঁচ মিলিগ্রাম আয়োডিন প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে গর্ভবতী ও শিশুর খাদ্যে অবশ্যই আয়োডিনের পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে।
হাসিনা আকতার, পুষ্টিবিদ