আয় বাড়লেও মুনাফা মার্জিনে ধস ইউনাইটেড পাওয়ারের

ইসমাইল আলী আতাউর রহমান: বিদ্যুৎ বিক্রি করলেই মুনাফা, বসে থাকলেও নিশ্চিত ক্যাপাসিটি চার্জÑএমনটাই দেশের বিদ্যুৎ খাতের চিত্র। তাই চুক্তির কারণে বসে থেকেও বর্তমানে প্রতিটি বিদ্যুৎ কোম্পানি মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ পাচ্ছে। এর বাইরে নয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ারও। গত এক দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে এ কোম্পানিটি রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।

যদিও গত কয়েক বছরে আয়ের ধারা ওঠানামা করেছে কোম্পানিটির, তবে মুনাফা মার্জিনে ধস নেমেছে ইউনাইটেড পাওয়ারের। টানা তিন বছর ধরে কমছে মুনাফা মার্জিন।

ইউনাইটেড পাওয়ারের কয়েক বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ হিসাববছর কোম্পানিটির মুনাফা মার্জিন ছিল ৬৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ হিসাববছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে ২০১৯-২০ হিসাববছর মুনাফা মার্জিন কমে দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০২০-২১ হিসাববছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ হিসাববছর দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত তিন বছরে কোম্পানিটির মুনাফা মার্জিন কমেছে ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশীয় পয়েন্ট।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের সমন্বিত বিক্রি থেকে আয় ছিল প্রায় এক হাজার ১২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তাদের মোট মুনাফা দাঁড়ায় ৭১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রশাসনিক ও পরিচালন খরচ বাদ এবং অন্যান্য আয় যোগ করে ইউনাইটেড পাওয়ারের পরিচালন মুনাফা ছিল ৭৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া আয় মিলিয়ে কোম্পানিটির কর-পূর্ব মুনাফা দাঁড়ায় ৭৮৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।

সে আয় থেকে আয়কর বাদ দিয়ে ইউনাইটেডের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৭৮৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের প্রফিট মার্জিন দাঁড়ায় ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। পাঁচ বছরের মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ মুনাফা মার্জিন। আর সর্বনি¤œ মুনাফা মার্জিন ছিল গত হিসাববছর।

এদিকে ২০২১-২২ হিসাববছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের সমন্বিত বিক্রি থেকে আয় ছিল প্রায় চার হাজার ৯৪৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর এ সময় সব খরচ ও কর বাদ দিয়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা দাঁড়ায় এক হাজার ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর আগের (২০২০-২১) হিসাববছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের আয় ছিল তিন হাজার ৫৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটি নিট মুনাফা ছিল এক হাজার ১১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের আয় বেড়েছে এক হাজার ৮৮৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর মুনাফা কমেছে ৯৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বা আট দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানিটির সচিব মোসতাক আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, মুনাফা মার্জিন বা মুনাফা দুটি কারণে কমেছে। একটি হচ্ছে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটে লোকসান এবং আরেকটি হচ্ছে জ্বালানি  তলের দাম বৃদ্ধি। তেলের দাম বৃদ্ধি হলে প্রথমে আয়ে প্রভাব পড়ে এবং পরে খরচে প্রভাব পড়ে। তাই আয় বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি। আয়, খরচ ও মুনাফার বিস্তারিত তথ্য আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া আছে বলে তিনি জানান।

আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটির ২০২০-২১ হিসাববছরের তুলনায় ২০২১-২২ হিসাববছরে জ্বালানি বাবদ খরচ বেড়েছে দুই হাজার ২১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গত হিসাববছর কোম্পানির তেল ও জ্বালানি বাবদ খরচ হয়েছে তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ হিসাববছর এ খরচ ছিল এক হাজার ৪৭২ কোটি তিন লাখ টাকা। এছাড়া ২০২১-২২ হিসাববছর কোম্পানিটির স্পেয়ার পার্টস ও লুব অয়েল বাবদ ব্যয় বেড়েছে ৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত বছর কোম্পানির এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা, আগের বছর যা ছিল ৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এদিকে ২০২১-২২ হিসাববছরে কোম্পানিটির ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে লোকসান বেড়েছে ৩২ কোটি ১২ লাখ টাকা। যদিও ২০২০-২১ হিসাববছর এ খাতে লোকসান ছিল মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। অপরদিকে গত হিসাববছর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগেও দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে। শেয়ারের বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় এ লোকসান হয়েছে।

তথ্যমতে, ইউনাইটেড পাওয়ারের মুনাফা মার্জিন শুরু থেকেই অনেক বেশি ছিল। এর মধ্যে ২০১২ সালে কোম্পানির মুনাফা মার্জিন ছিল ৬১ দশমিক ৭২ শতাংশ, ২০১৩ সালে ছিল ৫২ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৫৫ দশমিক ২১ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত (১৮ মাস) সময়ে এ হার ছিল ৭০ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ হিসাববছর শেষে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরেই ইউনাইটেড পাওয়ারের মুনাফার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ১৭৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে তা দাঁড়ায় ২৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ২০১৬ সালের জুন শেষে (১৮ মাসে) ৫৬০ কোটি ৬১ লাখ, ২০১৬-১৭ হিসাববছরে ৪১৭ কোটি ৪৯ লাখ, ২০১৭-১৮ হিসাববছরে ৭৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ হিসাববছরে ৭৮৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

যদিও করোনার কারণে ২০১৯-২০ হিসাববছরে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে কোম্পানিটির বিক্রি কমায় আয়ও কমে যায়। ফলে মুনাফা কমে দাঁড়ায় ৬০৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের মধ্যে ওই বছরই সবচেয়ে কম মুনাফা করে কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, সহযোগী কোম্পানি মিলিয়ে ইউনাইটেড পাওয়ারের বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১০টি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০