নিজস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে রয়েছে সুশাসনের অভাব। এ অভাব ডেকে আনে আয় বৈষম্য; আর এই আয় বৈষম্যের কারণে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক বৈষম্য। তারা বলছেন, এসব দেশে সুশাসনের অভাবে এমনটি ঘটছে। তার প্রভাব পড়ছে সমাজের নানা স্থানে। পাশাপাশি আমলাদের মনমানসিকতার কারণে এসব দেশের নাগরিকরা পায় না কাক্সিক্ষত সেবা।
তিন দেশেই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসনের অভাব কিংবা কম সুশাসন। এসব দেশে আয় বৈষম্য যেমন রয়েছে, রাজনৈতিক বৈষম্যও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুর্নীতি ও কর্মক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞানের অভাব।
গতকাল রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ডেভেলপমেন্ট পাথওয়েস ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ১৯৪৭-২০২২’ বইয়ের মোড়ক উšে§াচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান। অতিথি ছিলেন বইটির লেখক পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ইশরাত হুসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার।
রেহমান সোবহান বলেন, একটি দেশের অর্থনীতিতে যখন আয় বৈষম্য হয়, সেখানে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক বৈষম্য। আর এই রাজনৈতিক বৈষম্য ব্যাহত করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কোনো দেশের জন্য মানব উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন গুরুত্বপূর্ণ হলেও সুশাসন অন্যতম বিষয়। সুশাসনের ঘাটতি ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কথা হচ্ছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও খুব বেশি আলোচনা হয় না। অথচ আর্থিক খাতে বড় ধরনের সমস্যাগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাতের সমস্যা অন্যতম।
বইটির লেখক ড. ইশরাত হুসেন বলেন, এই তিন দেশের একটি সাধারণ চ্যালেঞ্জ হলো সুশাসনের অভাব। অর্থাৎ প্রশাসন জনসেবার জন্য যতটা কাজ করার কথা, ততটা করছে না। প্রশাসনের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি কিংবা ভালো কাজের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে সৃজনশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে না। বাইরে থেকে জ্ঞানকে খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছে না সরকারগুলো। এতে আমলাতন্ত্র বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থা টেকসই অর্থনীতির জন্য অন্যতম ঝুঁকি।
বক্তারা মুদ্রা বিনিময় হার প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মুদ্রা বিনিময় হারের প্রভাব কাজে লাগে না। বাংলাদেশে মুদ্রা বিনিময় হার ধরে রাখার কারণে রিজার্ভ কমে গেছে বলেও মন্তব্য করা হয়। এক্ষেত্রে এই হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়, মুদ্রা বিনিময় হারের ক্ষেত্রে একাধিক রেট থাকা উচিত নয়। একটি দেশের জন্য এক রেট থাকতে হবে। বাংলাদেশে দেখা যায় আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্সের জন্য আলাদা রেট দেয়া রয়েছে। এটি তুলে দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে শক্তির বহুমুখীকরণ দরকার। এখন ব্যবসা, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র এক হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ভারতে কিছুটা হলেও বাংলাদেশে হয়নি। এজন্য সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। এদেশে ঋণ বারবার রিশিডিউল করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেনÑবাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী, আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী, পিআরআই’র নির্বাহী পরিচারক ড. আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।