আয়-ব্যয় বেড়েছে, পরিবারপ্রতি মাসে সঞ্চয় ৯২২ টাকা: বিবিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের একটি পরিবার মাসে গড় আয় করে ৩২ হাজার ৪২২ টাকা; আর আয়ের বিপরীতে একটি পরিবারের ব্যয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ একটি পরিবার মাসে ৯২২ টাকার মতো সঞ্চয় করেন। আর দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার এখন বরিশাল বিভাগে। বরিশালে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে গতকাল বুধবার। সেখানে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের ফল প্রকাশ উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

বিবিএস বলছে, দেশের প্রতিটি খানার গড় আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ জরিপের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী খানার মাসিক গড় আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা, যা ২০১০ ও ২০১৬ সালের জরিপে ছিল যথাক্রমে ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা এবং ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা।

তবে প্রতিটি খানার মাসিক আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মাসিক ব্যয়ও বেড়েছে। ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে একটি খানার মাসিক ব্যয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, যা ২০১০ ও ২০১৬ সালে ছিল যথাক্রমে ১১ হাজার ২০০ টাকা এবং ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।

বিবিএস বলছে, দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার এখন বরিশাল বিভাগে। বরিশালে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ। বরিশাল অঞ্চলটি শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। সেখানে দারিদ্র্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে ওই বিভাগে দারিদ্র্য হার ছিল ২৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম পার্শ্ববর্তী খুলনা বিভাগে। এই বিভাগের দারিদ্র্যের হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিবিএস বলছে, গত ছয় বছরে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এখন ঢাকায় দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলেটে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, রংপুরে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ।

দেশে এখন সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশে অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ; ছয় বছর আগে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।

গত এপ্রিল মাসে খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়। দারিদ্র্য হারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ফলাফলের সঙ্গে চূড়ান্ত ফলাফলের পরিবর্তন নেই।

২০১৬ সালে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশের মতো দারিদ্র্য হার ছিল; এখন তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে বরিশালে দারিদ্র্য বেড়ে দেশের সর্বোচ্চ হয়েছে। কেন বাড়ল, আজকের অনুষ্ঠানে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দীপংকর রায়। তিনি বলেন, হয়তো মঙ্গার অভিবাসন হয়েছে। নদীর অববাহিকা ধরে তা বরিশালের দিকে গেছে।

বরিশাল শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত, সেখানে কেন দারিদ্র্য বাড়ল, তাও নীতিনির্ধারকেরা ভেবে দেখতে পারেন। দীপংকর রায় আরও বলেন, বরিশালে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি। সেখানে দারিদ্র্য কমার কথা। আবার কেউ বলতে পারেন, দারিদ্র্যের হার বেশি বলেই সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেশি। এটি আপেক্ষিক বিষয়।

অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বেশি খুলনা জেলায়। সেখানে দারিদ্র্যের হার বেশি হারে বাড়ার কথা। কিন্তু পাশের বিভাগে দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, দারিদ্র্য কমানোর প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বেশি জরুরি। কারণ হঠাৎ যেকোনো ধরনের আঘাতে তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারেন। তাদের সুরক্ষা দিতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচন টেকসই হবে।

অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের উপপরিচালক এবং খানার আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য কাউসার আহাম্মদ, বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। সশরীর উপস্থিত হতে না পারলেও তিনি ভিডিও বার্তা দেন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০