আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড

একসময় আমদানি করা সিরামিক পণ্য দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। সে অবস্থা এখন অতীত দেশেই একটি শক্ত অবস্থানে রয়েছে সিরামিক খাত। এ শিল্পের প্রসারে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অগ্রগণ্য তার মধ্যে অন্যতম আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সিরামিক শিল্প নবতর মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার ব্র্যান্ড আরএকে সিরামিকস। ১৯৯৮ সালের ২৬ নভেম্বর প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২০০০ সালের ১২ নভেম্বর। ২০০৮ সালের ১০ জুন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয় আরএকে সিরামিকস।

সিরামিকের পাশাপাশি পোরসেলিন টাইলস ও বাথরুম সেটসহ সব ধরনের স্যানিটারি সামগ্রী তৈরি ও বিপণন করে আরএকে সিরামিকস। বর্তমানে এখানে দুই হাজার ৫০০ মডেলের বেশি সিরামিক ও পোরসেলিন টাইলস রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে নতুন মডেলের পণ্য যুক্ত হচ্ছে তাদের তালিকায়। বিভিন্ন আকারের টাইলস রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। ২০–৩০ সেন্টিমিটার থেকে ৬০–৬০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে তাদের টাইলস। এখানে প্রায় ৩০ মডেলের এক্সক্লুসিভ স্যানিটারি ওয়্যার রয়েছে। বাংলাদেশে টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যারের ধারণাকে সমৃদ্ধ করেছে আরএকে সিরামিকস। এখানে সৃজনশীল ও দৃষ্টিনন্দন পণ্য প্রস্তুত করা হয়। গুণমান বিচারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায় এ প্রতিষ্ঠানকে। তবে পণ্যের দাম ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। বেসিন, ওয়াটার ক্লোজেট, মার্বেল সেটসহ অন্য আনুষঙ্গিক স্যানিটারি পণ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য। মডেলগুলো অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে একেবারে আলাদা। এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আকৃষ্ট করে সব শ্রেণির ক্রেতাকে। বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী ও সততায় অগ্রগণ্য বিষয়গুলো রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠান। বলা হয়, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় টাইলস ও স্যানিটারি সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আরএকে সিরামিকস, যা পরিণত হয়েছে ক্রেতার আস্থার প্রতীকে।

বিএসটিআই অনুমোদিত আরএকে সিরামিকসের সব ধরনের পণ্য কনস্ট্রাকশন ডেভেলপার, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে পণ্য সরবরাহ করে। বছরে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ বর্গমিটার টাইলস উৎপাদন করে। প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার স্যানিটারি ওয়্যার প্রস্তত করে। উৎপাদনের সব পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। সাকমি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এখানে। ফলে গুণগত মানের পাশাপাশি সাশ্রয়ী তাদের সব পণ্য। উৎপাদনের সব পর্যায়ে নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পণ্যগুলোর ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। সঙ্গত কারণে ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় তাদের সব পণ্য।

ধারাবাহিক উৎপাদন প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রি ও মুনাফা প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে চলেছে। গত বছরও কারখানা সম্প্রসারণ ও নতুন মেশিন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর পণ্য সরবরাহের জন্য আরএকে সিরামিকসে সুদক্ষ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের চারটি শোরুম রয়েছে। তবে শুধু মুনাফা অর্জনই নয়, ব্যবসার পাশাপাশি এই খাতে অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকতে চায় আরএকে সিরামিকস।

গ্রাহক চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে আরএকে সিরামিকস। পণ্য বিক্রির পরও তাদেরকে বিনা মূল্যে অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ছিল ৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

আরএকে সিরামিকসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন আবদাল্লা মাসাদ। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পের অন্যতম পুরোধা বলা হয় তাকে। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি তিনি। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে দুবাইভিত্তিক রাস আল খাইমাহ (আরএকে) গ্রুপ। সিরামিকসের পাশাপাশি তিনি বিনিয়োগ করেছেন ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, সিকিউরিটি সার্ভিস, পেইন্টস, পাইলিং, বিদ্যুৎ কোম্পানি, স্পিনিং ও প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার ভূমিকা রয়েছে। আরএকে সিরামিকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হুসাইন ও প্রধান অর্থ কর্মকতা কৌশিক দাশ প্রমুখ। এ প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কাজের অনেক সুবিধা রয়েছে। একই সঙ্গে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, নকশা, সিরামিস্ট প্রভৃতি পদে কাজের সুযোগ রয়েছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মপরিবেশ নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কেননা যথাসময়ে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের বেতন, ভাতা, আবাসন, গোষ্ঠীবিমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। এখানে কর্মী কল্যাণ তহবিল রয়েছে। উন্নত, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বেশ সচেষ্ট। নির্মাণশিল্পীদের মানোন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে কর্মশালার আয়োজন করে থাকে তারা। পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান এর হিসেবে সুনাম রয়েছে। পরিচ্ছন্ন প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা প্রণয়নে বেশ আন্তরিক সংশ্লিষ্টরা। সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আরএকে সিরামিকসের কারখানা। বৃষ্টি ও ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ সুবিধা রয়েছে। রিসাইক্লিং সুবিধাও রয়েছে এখানে।

অর্জন

ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড, আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৬

গোল্ড অ্যাওয়ার্ড, আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৬

সিক্সটিনথ আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)

থার্ডটিনথ আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)

সিরামিক ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০১৭

 

রতন কুমার দাস

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০