Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:21 pm

আরও তিন বছর থাকছেন ওয়াসার তাকসিম!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের চুক্তির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ড সভায় উপস্থিত ৭ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জন চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। এ কারণে বোর্ড প্রকৌশলী তাকসিমের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবেন শিগগিরই। এটি বাস্তবায়ন হলে সপ্তমবারের মতো তাকসিমের চাকরির মেয়াদ বাড়বে।

জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রথম ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ছয়বার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে ওয়াসা বোর্ড। ৭ দফা চুক্তির সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ অক্টোবর। এখনও তার চাকরির মেয়াদ তিন মাসের বেশি সময় বাকি আছে। তবে এ সময়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে তাকে পুনারায় এমডি পদে বহাল রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তাকসিম এ খান প্রথম দফায় ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর নিয়োগ পান ওয়াসার এমডি হিসেবে। পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে তিনি প্রথমবার নিয়োগ পান। অভিযোগ আছে সেই সময় তাকসিমের আবেদনের যোগ্যতাই ছিল না। বেআইনিভাবে তিনি নিয়োগ পান।

প্রথম দফা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বোর্ড তিন বছরের জন্য চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলে সরকার ২০১২ সালে এক বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৩ সালে বাকি দুই বছর মেয়াদ

 বৃদ্ধি করা হয়। চতুর্থ দফায় ২০১৫ সালের তাকসিমের বান্ধবী জুয়েনা আজিজ বোর্ড চেয়ারম্যান থাকাকালীন পত্রিকায় লোক দেখানো বিজ্ঞপ্তি দিলেও নিজের দেয়া শর্তমতো তিন বছরের জন্য আবারও নিয়োগ পান তিনি।

এরপর ২০১৮ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশমতো বোর্ড তিন বছরের জন্য প্রস্তাব দেয়। সেই অবৈধ নির্দেশেই পঞ্চমবারের মতো তার এমডির মেয়াদ আরও তিন বছর বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ২০২০ সালে বোর্ড আবারও তাকসিমের মেয়াদ তিন বছরের

 জন্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলে সরকার তা অনুমোদন করে। আর সর্বশেষ গতকাল বোর্ড সভায় আবারও তাকে তিন বছরের জন্য এমডি মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়।

সূত্র জানায়, এই প্রস্তাব পাস হলে তা হবে নজিরবিহীন। দেশের ইতিহাসে একই পদে এত দীর্ঘ সময় কেউ ছিলেন না। তিনি সর্বোচ্চ বেতন নেয়া সরকারি কর্মচারী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। তার এই দুর্নীতির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলো এখন কোনোটাই সফল হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অফিস করার অনুমতি নিয়ে তাকসিম এ খান  বিতর্কিত হন। আগামীকাল (১৩ জুলাই) ওয়াসার নির্মিত বিতর্কিত দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট উদ্বোধনের কথা রয়েছে। যদিও এ প্রকল্পে অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান ও বুয়েটের অধ্যাপক ডা. সুজিত কুমার বালা শেয়ার বিজকে বলেন, এমডির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা ওয়াসার সচিব শারমিন হক আমীরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এছাড়া ওয়াসার বোর্ড সদস্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল সভায় উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান। ওয়াসা বোর্ডের অন্য কোনো সদস্যও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সদস্য বলেন, এক্ষেত্রে বিরোধিতা করে লাভ নেই। আগে থেকেই সবকিছু নির্ধারিত ছিল।

উল্লেখ্য, এর আগে গত মে মাসে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা, অসদাচরণ ও আইন অমান্যের অভিযোগ এনে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার চার দিন পর পদ হারিয়েছিলেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা। তাকে সরিয়ে এ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বুয়েটের অধ্যাপক সুজিত কুমার বালাকে। অভিযোগ রয়েছে, সুজিত কুমার বালা ও তাকসিম এ খান ভালো বন্ধু। তারা রাশিয়ায় একই সঙ্গে লেখাপড়া করেছেন।