নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার কেনা-বেচায় অনিয়ম পাওয়ায় আরও দুই মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার বাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে এখন পর্যন্ত ৮০টি মানি চেঞ্জার পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে সোমবার তিনটি আর গতকাল আরও দুটি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। এছাড়া ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ডলার কেনাবেচায় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শোকজ করা হয়।
ডলারের বাজার স্বাভাবিক করতে গত বুধবার মাঠে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ হাউস ও খোলাবাজার পরিদর্শন শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০টি পরিদর্শক দল। কারণ গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১২ টাকায় বেচাকেনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ অভিযান শুরু করে।
ডলার নিয়ে কারসাজি করায় ফকিরাপুলের বিসমিল্লাহ মানি চেঞ্জার, পুরানা পল্টনের অঙ্কন মানি চেঞ্জার এবং নয়া পল্টনের ফয়েজ মানি এক্সচেঞ্জসহ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জের সংখ্যা ২৩৫টি। এর মধ্যে ২০২টি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযান চলার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবারও খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১০৯ থেকে ১১০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকগুলোয় আমদানির দায় মেটাতে খরচ হচ্ছে ১০০ থেকে ১০২ টাকা। আর প্রবাসী আয় আনতে ব্যাংকগুলো খরচ করছে ১০৮ টাকা।
এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, মানি এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন চলছে। লেনদেনের বিভিন্ন তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করছি। বিষয়গুলো তদারকি করা হচ্ছে। তাদেরও অনিয়ম পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া আমদানির অধিক চাপে বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সে সবের এখন সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন গর্ভনর দায়িত্ব নেয়ার পর আমদানি ও ডলার সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এগুলো বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা আগামীতে অর্থনীতির সুফল বয়ে আনবে।
তিনি আরও বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন দেয়া হয়েছে, যেটা আগে ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে হয়ে থাকত। ফলে অনেক বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি কমে এসেছে।
এছাড়া তিন মিলিয়নের এলসি খোলার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়, আগে যেটা ছিল পাঁচ মিলিয়ন। যার কারণে এখন এলসি খোলাতে অনেক অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক আটকিয়ে দিচ্ছে।
কী ধরনের অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছেÑএমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, অনেক ক্ষেত্রে হেড অফিসের অনুমতি ছাড়াই এলসি খোলা হচ্ছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে পণ্য আনবে, সে পণ্যের মূল্য অনেক ক্ষেত্রে বেশি দেখাচ্ছে। এসব আটকিয়ে দেয়ার কারণে অনেকে এলসি খুলছে না, যার ফলে এক মাসের ব্যবধানে ২৬ শতাংশ কমে গেছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা অনেকটা কমে যাবে।