আরও সাত বছর করপোরেট কর অব্যাহতি চায় তথ্যপ্রযুক্তি খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের করপোরেট কর অব্যাহতির মেয়াদ চলতি অর্থবছরে শেষ হচ্ছে। এ সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে দেশের বিকাশমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ সংকুচিত হবে, বাধাগ্রস্ত হবে রপ্তানি বাজার। এমনটা দাবি করে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধা চান আইসিটি উদ্যোক্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের পাঁচটি তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠন এই দাবি জানিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক এবং ই-ক্যাব-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন উপস্থিত থেকে নিজ সংগঠনের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি রপ্তানি প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

২০২৯ সালের মধ্যে সরকারের পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাওয়া রক্ষার্থে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই এসব লক্ষ্য অর্জনে সরকারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে।

বেসিস-সহ পাঁচটি তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠন কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হলে খাতের প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ এবং রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে।

বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে যদি করের আওতায় আনা হয়, সেটা মোট রাজস্ব আয়ের এক শতাংশও হবে না। তথ্যপ্রযুক্তি খাত সবেমাত্র দাঁড়াতে শুরু করেছে, সামনে দৌড়ানোর সময়। এসময় শুধু সরকারের এই অল্প আয়ের জন্য একটা সম্ভাবনাময় খাতকে হুমকিতে ফেলা ঠিক হবে না। যেহেতু সরকার দেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চায়, তাই এই খাতে কর অব্যাহতি বজায় রাখা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ।’

বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে বিনিয়োগ করে, সেক্ষেত্রে কর অব্যাহতির সুবিধা বলবৎ রাখার কোনো বিকল্প নেই।’

বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে সরকার মনে করছে এই শিল্প খাত থেকে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। কিন্তু এই শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কর্মরত পেশাজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান এবং মূল্য সংযোজন কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারা এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।’

আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমদানিনির্ভর আইএসপি খাতের যন্ত্রপাতি ও ডলারের ঊর্ধ্বগতির বাস্তবতায় তারা ১০ শতাংশের বেশি লাভ করতে পারেন না। ফলে ইন্টারনেট সার্ভিসের বিলের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর (এআইটি) আরোপে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’ আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইন্টারনেট সার্ভিসের ওপর ১০ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহারের দাবি জানান।

ই-ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতকে আমাদের আরও কিছুদিন বিশেষ যত্ন ও সুবিধার দেয়া প্রয়োজন। কর অব্যাহতি হলো তার একটি। এর মাধ্যমে এ খাত টেকসই ও সক্ষম হয়ে উঠবে। এখনই অব্যাহতি রহিত করলে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

 

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০