নিজস্ব প্রতিবেদক: রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে প্রতারণা ও আত্মসাতের চার মামলায় মোট ২৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। উত্তরা পশ্চিম ও উত্তরা পূর্ব থানার এই চার মামলায় ৪০ দিনের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গতকাল রোববার প্রত্যেক মামলায় সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সাহেদের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন।
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে র্যাব গতকাল রোববার সকালে সাহেদকে আদালতে হাজির করে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি মামলায় তাকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়।
এর মধ্যে তিনটি মামলা উত্তরা পশ্চিম থানার। এর দুটিতে ইট, বালু-সিমেন্ট সরবরাহের টাকা আত্মসাৎ এবং অন্যটিতে হোটেলের অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর উত্তরা পূর্ব থানার মামলাটি করা হয়েছে জাল টাকা রাখার অভিযোগে।
সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান ও শাহ আলম রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। কিন্তু তারা মাত্র একটি মামলায় ওকালতনামা জমা দিতে পেরেছিলেন বলে বিচারক আসামি সাহেদের কাছেই জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কি না। জবাবে বিতর্কিত এই ব্যবসায়ী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি অপরাধ করেছি। আমি পাওনাদারদের সব টাকা দিয়ে দেব। রিমান্ডে গেলে আমি আর কুলাতে পারব না।’
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি সাজ্জাদুল হক শিহাব এবং সহকারী পিপি আজাদ রহমান। পরে আজাদ রহমান বলেন, যে মামলায় সাহেদকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছে, সেই মামলায় জামিন চেয়েছিলেন তার আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে বিচারক তা নাকচ করে দেন। পাশাপাশি চার মামলায় সাহেদকে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকেও এদিন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়।
পুলিশের আবেদনের শুনানি করে মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী আসামি মাসুদকে তিন মামলায় সাত দিন করে আরও ২১ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এছাড়া অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের অন্য দুটি মামলায় মাসুদকে গ্রেপ্তার দেখানোর অবেদন মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভঁ‚ইয়া।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়মবহিভর্‚তভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর গত ৭ ও ৮ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
র্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্ট মালিক সাহেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে। অভিযানের পর ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে র্যাব। শুরুতে মামলাটি থানা পুলিশের হাতে থাকলেও পরে তা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।
এরপর গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিনই তাকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ সাহেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পায়।
এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আবার এ মামলার দায়িত্ব নেয় র্যাব। রিমান্ডের ষষ্ঠ দিনে তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেই রিমান্ড শেষে রোববার তাকে নতুন করে ২৮ দিনের রিমান্ডে পাঠালেন আদালত।