সোহেল রহমান: লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-ভাতাসহ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন’ (বিএসএফআইসি)-কে চলতি অর্থবছরে আরও ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। যদিও এ খাতে ৩৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছিল বিএসএফআইসি। সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের সুপারিশকৃত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সম্প্রতি অনুমোদন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বাজেটে রক্ষিত ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ থেকে এই ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। প্রদেয় এই অর্থ বিএসএফআইসি’র অনুকূলে ভর্তুকি খাতে সমন্বয় করা হবে। এর আগে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিএসএফআইসির অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
ইতিপূর্বে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিএসএফআইসিকে ১৭৫ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩৫ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
বিএসএফআইসি সূত্রে জানা যায়, উপর্যুপরি লোকসান ও ট্রেড গ্যাপের (বেশি দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি) কারণে চলতি অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-ভাতাসহ চিনি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় চিনিকলগুলো সচল রাখতে ভর্তুকি ও ট্রেড গ্যাপ সমন্বয়ের শর্তে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় সংস্থাটি।
জানা যায়, বিএসএফআইসির আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের সংখ্যা ১৫টি। বেসরকারি চিনিকলগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন ব্যয় এবং অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশ থেকে বেশি দামে চিনি আমদানি করে কম দামে বিক্রিসহ বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে।
বিএসএফআইসির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত সংস্থার উৎপাদিত চিনি সরকার নির্ধারিত (উৎপাদন খরচের তুলনায় কম) দরে বিক্রি করায় প্রায় ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে সংস্থাটি। অন্যদিকে ২০১০-১২ সালে বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করে কম দরে বিক্রি করায় ট্রেড গ্যাপ হয়েছে প্রায় ৪৯০ কোটি টাকা।
বিএসএফআইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোতে এক কেজি চিনি উৎপাদনে ব্যয় হয় ১০০ টাকা। এর বিপরীতে বর্তমানে বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক কেজি চিনির মূল্য হচ্ছে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি চিনিতে সংস্থাটির লোকসান ৪৫ টাকা। উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় বর্তমানে বিএসএফআইসির গুদামে প্রায় ৬০ হাজার টন চিনি অ-বিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে।