Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:15 am

আরও ৬১ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা সবাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। শনিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে, ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং বাকি ১৬ জন সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির যেসব নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ এর আগে আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলায় ভোটে অংশ নেয়ায় এর আগে ৭৯ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। অর্থাৎ দুই দফায় বিএনপি বহিষ্কার করল মোট ১৪০ জনকে। প্রথম দফায় বহিষ্কার করার পর এক নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপি তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছে। বাকিরা কেউ নির্বাচন থেকে সরতে রাজি নন। বরং ভোট বর্জন করায় দলকেই দুষছেন তারা।

চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা বহিষ্কার: রংপুর বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপির পদ হারিয়েছেন মোট চারজন। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ে আছেন দুজন। তাদের মধ্যে আছে পঞ্চগড় বোদা উপজেলায় প্রার্থী হাবিব আল-আমিন ফেরদৌস। তিনি বিএনপির ময়দানদিঘি ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি। দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। অন্য দুজন হলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রার্থী রিয়াদ আরফান সরকার রানা (সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক) এবং দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রিয়াজুল ইসরাম রীজু (দিনাজপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা)।

রাজশাহী বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপির পদ হারিয়েছেন দুজন। তারা হলেন নাটোরের লালপুরের ভিপি আরিফ (যুগ্ম আহ্বায়ক, লালপুর উপজেলা শাখা) এবং বাগাতিপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক (যুগ্ম আহ্বায়ক, বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখা)।

খুলনা বিভাগে চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন তিনজন। তারা হলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জুলফিকার আলী ভুট্টো (সাবেক সহসভাপতি, গাংনী উপজেলা বিএনপি), খুলনার দিঘলীয়া উপজেলার এনামুল হক মাসুম (সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, জেলা বিএনপি) এবং ফুলতলা উপজেলার সাব্বির আহমেদ রানা। তিনি খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

বরিশাল বিভাগে বরগুনা সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিমের সব পদ কেড়ে নিয়েছে বিএনপি। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিভাগে পদ হারিয়েছেন চার চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাদের মধ্যে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলারই দুজন। তারা হলেন মো. আব্দুল মান্নান (মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, জেলা বিএনপি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দল) এবং খন্দকার লেয়াকত হোসেন। শেষোক্ত জন জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।

বাকি দুজন হলেন টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল (সহসভাপতি, জেলা বিএনপি) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার মাহবুবুর রহমান বাচ্চু হাওলাদার। তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।

ময়মনসিংহ বিভাগে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির সদস্য পদ হারিয়েছেন। তারা হলেন ময়মনসিংহ সদরের হোসাইন নুর মোহাম্মদ আনির (সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, সদর থানা কৃষক দল) এবং শেরপুরের নকলার প্রার্থী মোকসেদুল হক শিপলু। তিনি জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। সবচেয়ে বেশি সাত চেয়ারম্যান প্রার্থী পদ হারিয়েছেন সিলেট বিভাগে। তারা হলেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কামাল (ধর্মপাশা উপজেলার প্রার্থী), তাহেরপুর উপজেলা বিএনপির প্রার্থী ও একই উপজেলার সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার দুই প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ দুলাল ও মোহন মিয়া বাচ্চু, জামালগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সদস্য নুরুল হক আফিন্দি, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান সেফু এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রার্থী ও জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বাকি তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী চট্টগ্রাম বিভাগের। তারা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান রানা, কক্সবাজারের পেকুয়ার প্রার্থী সাফায়েত আজিজ রাজু (পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি) এবং বান্দরবানের লামার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার। ঢাকা বিভাগেরও আছেন দুজন। তাদের মধ্যে আসাদ মাতব্বর ফরিদপুরের সালথায় এবং মাহমুদুল হাসান রবিন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা: রংপুর বিভাগের চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা হলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মোরসালিন বিন মমতাজ রিপন, দেবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রহিম, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হযরত আলী এবং বীরগঞ্জ উপজেলার মামুনুর রহমান মামুন।

রাজশাহী বিভাগে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়াউর রহমানও বহিষ্কৃত হয়েছেন।

খুলনা বিভাগের আছেন দুজন। তারা হলেন আমিরুল ইসলাম ও গোলাম রহমান। দুজনই ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে আছেন দুজন। এরা হলেন বরগুনা সদর উপজেলার সানাউল্লাহ সানি ও জয়নুল আবেদীন রাফি মোল্লা। ময়মনসিংহ বিভাগে আছেন দুজন। দুজনই শেরপুরের নকলা উপজেলার প্রার্থী। তারা হলেন রেজাউল করিম ও দেওয়ান মামুন। সিলেট বিভাগের আছেন চারজন। তারা হলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সিলেটের জৈন্তাপুরের ছাদ উদ্দীন সাদ্দাম, মৌলভীবাজার সদরের আব্দুল হেকিম ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আব্দুল আলিম ইয়াছিনী। চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন বাকি দুজন। তারা হলেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আবু বক্কর সিদ্দীকি রুবেল ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কামাল উদ্দীন।

সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী: রংপুর বিভাগের আছেন তিনজন। তারা হলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার লাইলী বেগম, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ফিরোজা বেগম সোনা এবং গাইবান্ধা সদরের শিল্পী খাতুন। রাজশাহী বিভাগে সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুজন। তারা হলেন নওগাঁর পোরশা উপজেলার মমতাজ বেগম ও পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নাসরিন পারভীন মুক্তি। খুলনা বিভাগে বহিষ্কৃত হয়েছেন একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি হলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রার্থী ইন্দোনেশিয়া শিতু। ময়মনসিংহ বিভাগে বহিষ্কার হয়েছেন দুজন। তারা হলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রোকসানা বেগম এবং শেরপুরের নকলার দেওয়ান কোহিনুর। ঢাকা বিভাগেও বহিষ্কারের আদেশ পেয়েছেন দুজন। তারা হলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার প্রার্থী তাসলিমা জেসমিন পাপিয়া ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রার্থী শাহিনুর আক্তার বিউটি।

সিলেট বিভাগে সংরক্ষিত নারী আসনের চার প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা হলেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভপুর উপজেলার মদিনা আক্তার, সিলেটের জৈন্তাপুরের পলিনা রহমান, মৌলভীবাজারের রাজনগরের প্রার্থী ডলি বেগম এবং হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আলফা বেগম।

চট্টগ্রাম বিভাগে সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিএনপির পদ হারিয়েছেন দুজন। তারা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রাবেয়া আক্তার রুবি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হামিদা চৌধুরী।