আরও ৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে জনসন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এবং চিকিৎসাসামগ্রী ও প্রসাধন প্রস্তুতকারী মহিরুহ প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসন (জেঅ্যান্ডজে) নিজেদের জনপ্রিয় পণ্য বেবি ট্যালকম পাউডার ব্যবহারের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত যেসব মার্কিন নাগরিক মামলা করেছেন, তাদের আরও ৭০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের ৪৪ কোটি দেয়া হবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মামলাকারীদের। খবর: এপি ও রয়টার্স।

চুক্তি অনুযায়ী, জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছ থেকে নিউইয়র্ক রাজ্য চার কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে, যা তিন বছরের মধ্যে চারটি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। যদিও এই সমঝোতার মাধ্যমে গ্রাহকদের দায়ের করা হাজার হাজার মামলা নিষ্পত্তি হবে না। এসব মামলার বাদীদের অভিযোগ, জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্যের কারণে তাদের বা তাদের নিকটাত্মীয়ের ক্যানসার হয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে মামলাকারীদের ৮৯০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল জনসন। সে হিসেবে এবার দ্বিতীয় দফা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে কোম্পানিটি। জেঅ্যান্ডজে বলেছিল, এই অর্থ ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে অভিযোগ তোলা হাজার হাজার মানুষকে দেয়া হবে। কাজটি করবে এলটিএল ম্যানেজমেন্ট এলএলসি নামে তাদের একটি সহায়ক সংস্থা। মূলত অভিযোগকারীদের দাবির সমাধান করার জন্যই এলটিএল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি দেউলিয়াত্ব সুরক্ষার জন্য আবেদন করে সংস্থাটি। যদিও তাদের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন একজন বিচারক।

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল গত মঙ্গলবার লেটিশিয়া জেমসের দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যাল্ক পণ্য ব্যবহারের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অর্থ দিয়ে তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে মার্কিন প্রশাসন এই কোম্পানিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।

বিশ্বজুড়ে একসময় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার। তবে এতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতির অভিযোগ ওঠে ২০১৮ সালে। পরীক্ষায় সেই অভিযোগ প্রমাণিতও হয়। তারপর দেশটির ৪২টি অঙ্গরাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটনের বিভিন্ন আদালতে জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন শত শত নারী। মামলাকারীদের অনেকে এজাহারে জানান, এই বেবি পাউডার ব্যবহারের পর ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন তারা। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজন মামলাকারীর মৃত্যুও হয়েছে। তাদের সবার মৃত্যুর কারণ ডিম্বাশয়ের ক্যানসার।

এই পরিস্থিতিতে ব্যাপক সমালোচনা ও চাপে ২০২০ সালে বাজার থেকে নিজেদের সব বেবি ট্যাল্ক পাউডার প্রত্যাহার করে নেয় জনসন অ্যান্ড জনসন। ২০২২ সালে এক বিবৃতিতে ট্যাল্ক পাউডার আর তৈরি করবে না বলে ঘোষণা দেয় জনসন অ্যান্ড জনসন। ১৯৭১ সাল থেকে এই পণ্য তৈরি করে আসছিল কোম্পানিটি। যদিও আজ পর্যন্ত তারা ভুল স্বীকার করেনি এবং এখনও বলছে, তাদের পণ্য ক্যানসার সৃষ্টি করে না।

এক বিবৃতিতে জনসন অ্যান্ড জনসন ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিটিগেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাস বলেন, ট্যালকম পণ্য মামলা চূড়ান্তভাবে সমাধানের জন্য সংস্থাটি ‘বিভিন্ন পথ’ অনুসরণ করছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে পূর্বেঘোষিত একটি চুক্তির বাস্তবায়নও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে দাবির বিষয়ে ৪৩ স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে একটি কনসোর্টিয়ামের পৌঁছেছিল জেঅ্যান্ডজে।

এরিক হাস তার বিবৃতিতে আরও বলেন, যারা মামলা বা নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমাদের সম্মতিমূলক দেউলিয়াত্ব রেজোল্যুশনে অংশ নিতে চায় না, আমরা তাদের দাবির সমাধান করা অব্যাহত রাখব।

উল্লেখ্য, ট্যালকম পাউডার তৈরির প্রধান উপাদান ট্যালক, যার রাসায়নিক নাম ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট। এটি প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে নরম খনিজ পদার্থ। এতে রয়েছে অ্যাসবেস্টস। অ্যাসবেস্টস হলো প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ছয় সিলিকেট খনিজের একটি সেট, যা তার সুবিধাজনক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যর কারণে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহƒত হয়। রেশম ও পশমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এই খনিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অনেক মিল দেখা যায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০