নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন অভিযোগে টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগের মধ্যে মির্জাপুরের দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাসহ ৬২ জনকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে ৬৯ বছর বয়সী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল বুধবার আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে দেন। আগামী ২২ এপ্রিল সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল। আসামি মাহবুবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান। তুরিন আফরোজ পরে গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগ গঠনের সময় আসামিকে তিনটি অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। তিনি সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। প্রসিকিউশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তের বাবা আবদুল ওয়াদুদ একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। মাহবুব ও তার ভাই আবদুল মান্নান ছিলেন রাজাকার বাহিনীর সদস্য। তাদের বাড়ি মির্জাপুরের বৈরাটিয়া পাড়ায়।
২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করলে ওই বছর নভেম্বরে মাহবুবকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান গত বছরের ২ নভেম্বর প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ বছর ১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল ওই অভিযোগ আমলে নেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রনদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়। তারা রনদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রনদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রনদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।
তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশেপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশেপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন আসামি মাহবুব।
প্রসঙ্গত, জনহিতৈষী কাজে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকায় ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রনদা প্রসাদ সাহাকে। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়।