নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্য মজুত বাড়াতে দ্বিতীয় দফায় আবারও চালের আমদানি শুল্ক কমাতে যাচ্ছে সরকার। আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকালের মধ্যে এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে। এতে ভারত ও বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বেসরকারি চাল আমদানির সম্ভাবনা আরও বাড়বে। যেভাবে বন্যা আসছে, তাও একটা বিপদের অবস্থা। সব মিলিয়ে আমরা এবার ১৫ লাখ টন চাল এবং পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলের শুরুতে আগাম বন্যায় হাওরে ফসলহানি এবং সরকারের মজুত তলানিতে নেমে আসায় চাল আমদানির প্রয়োজন পড়ে। যার প্রেক্ষাপটে গত ২০ জুন আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। পরে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। এখন আবার দ্বিতীয় দফায় শুল্ক কমানো হচ্ছে। দুই ধাপে শুল্ক কমানোর আগে বিদেশ থেকে চাল আনতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। জুনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পাশপাশি রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়।
বাজারে চালের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ দরে ওঠে কয়েক মাস আগে। এতে বেসরকারি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সরকারও বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি করছে। তবে এসব কার্মকাণ্ডের পরও বাজার পরিস্থিতিও খুব বেশি বদলায়নি। বরং দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ২০ জেলায় চলমান বন্যায় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। মোটা চালের কেজি এখনও ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। আর একটু ভালো মানের চাল চাইলে কেজিতে ৬০ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
অবশ্য খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, চালের দাম এখনও মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। তিনি বলেন, ‘বাজারে চালের দাম খুব একটা বেশি নেই, এখন একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। সবার কাছে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আছে, এখন বাজারে দাম বেশি না।’
বুধবারের বৈঠকে সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবার এক কোটি ৯১ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ টন কম। এছাড়া বোরো মৌসুমে সরকার মোট ১০ লাখ টন চাল এবং দেড় লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে দুই লাখ ৭০ হাজার টন বোরো এবার সংগ্রহ করা যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো রকম খাদ্য সংকট নেই। আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে, বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে। আমরা কেবল সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি করছি। আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় পর ভারত থেকে এ পর্যন্ত দুই লাখ ৬০ হাজার টন চাল এবং পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টন গম এসেছে’ বলে জানান মন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন।