মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: আইডিএলসিকে বলা হয় বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পথপ্রদর্শক। আর্থিক খাতে আইডিএলসি এগিয়ে থাকলেও পুঁজিবাজারের নেতৃত্বে রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। দুটি প্রতিষ্ঠান যে যার অবস্থানে শীর্ষে থাকলেও নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সম্প্রতি আবির্ভাব ঘটেছে আইপিডিসির। অল্পদিনে নতুন কোম্পানিটি বাজারে একটি অবস্থান তৈরি করেছে। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ নিয়ে তারা দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে চিন্তিত আইডিএলসি ও লংকাবাংলা।
সূত্র জানায়, ব্র্যাকের মালিকানা হিসেবে আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তির এক বছর না হতেই আলোচনায় চলে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। শীর্ষ দুই কোম্পানির জন্য একে বড় চ্যালেঞ্জও মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, ব্র্যাক ব্যাংকের মতো যদি কাজ করতে পারে, তবে আইপিডিসির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে বেশি সময় লাগবে না। যদিও নতুন এ প্রতিষ্ঠানটির আয়, মুনাফাসহ অন্যান্য নির্দেশক শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করার মতো সময় আসেনি। তবু আইডিএলসি ও লংকাবাংলা আইপিডিসিকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখছে।
আইপিডিসির এমডি ও সিইও মোমিনুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, দেশজুড়ে গ্রামগঞ্জে সাধারণ ভোক্তা
পর্যায়েও আইপিডিসি তাদের আর্থিক সেবার প্রসার ঘটাতে চায়। এ জন্য নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে পুনঃযাত্রা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানটি আরও ভালো করবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় সারথি হয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে চায় আইপিডিসি। এ জন্য অর্থায়নের ক্ষেত্রটিকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।
আর্থিক খাতের এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবার আগে ১৯৯২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আইডিএলসি ফাইন্যান্স। অন্য দুটি অর্থাৎ আইপিডিসি ও লংকাবাংলা পুঁজিবাজারে আসে ২০০৬ সালে। তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বশেষ আইডিএলসি নগদ ৩০ লভ্যাংশ দেয়। এর থেকে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত মুনাফা হয় ৫.২৬ টাকা। আইডিএলসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান লভ্যাংশ পেয়েছেন লংকাবাংলার শেয়ারহোল্ডাররা। তারাও সর্বশেষ বছরে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। আইপিডিসি থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। সর্বশেষ বছর লভ্যাংশের পরিমাণ বেড়ে হয় ২০ শতাংশ।
এদিকে আইপিডিসির মুনাফার দিকে তাকালেও দেখা যায় প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি হচ্ছে। আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ছিল ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে লংকাবাংলার মুনাফা দুই কোটি টাকা বেড়ে হয় ৪২ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অন্য প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ২০১৫ সালে মুনাফা করে প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছর যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭৮ কোটি টাকায়।
অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কিনা, তা জানতে চাইলে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই। তবে যে কোনো সেক্টরে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থাকা খারাপ নয়। এটা কম-বেশি সবার মধ্যেই থাকে। অন্য প্রতিষ্ঠান কি করছে, সেটা না ভেবে আমরা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে বলি। একই বিষয়ে লংকাবাংলার কোম্পানি সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের কারও সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। লংকাবাংলা নিজের মতো করে ব্যবসা করছে। অন্যরা ব্যবসা করছে তাদের মতো করে। কাজেই কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার ইচ্ছে আমাদের নেই। পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে। তারা যে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ভালো মনে করবেন, সেখানেই বিনিয়োগ করবেন। আমরা শুধু বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি।
বেসরকারি শিল্প খাতে ঋণ সহায়তা দিতে ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে আইপিডিসি। দীর্ঘ যাত্রার পর এখন প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। নতুন এ পরিকল্পনায় ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির নজর তরুণ উদ্যোক্তা শ্রেণি, নারী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এসএমই), গৃহঋণ ও রিটেইল বা খুচরো পর্যায়ে অর্থায়নকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিল্প খাতেও ঋণ সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। ইতোমধ্যে আইপিডিসির মালিকানায়ও পরিবর্তন এসেছে। গত বছর থেকে কোম্পানিটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্র্যাক, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন ও আরএসএ ক্যাপিটাল। এ তিন প্রতিষ্ঠান মিলে আইপিডিসির ৪০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে।