আর্থিক খাতে পরিবর্তন আনবে যে তিনটি বিষয়

মো. আব্দুল কাদের খান: বর্তমান পেক্ষাপটে প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় লাভবান হওয়া এবং সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য লড়াই করবে। শিল্প জুড়ে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ায় তা অর্থনীতিকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যে লোকেরা খুব কমই খরচ করবে। এই সমস্ত প্রবণতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও একটি চাপ সৃষ্টি করছে ও ভবিষ্যতে আরো করবে। এই লকডাউন বিভিন্নভাবে আর্থিক পরিষেবা খাতকে প্রভাবিত করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদান প্রদানের উত্থান হবে: সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বের ওপর জোর দেওয়ার পরে ডিজিটাল অর্থ আদান-প্রদান অগ্রাধিকার পদ্ধতিতে পরিণত হবে, যা এখন নিসন্দেহে বলা যায়। যদিও অর্থনীতির সামগ্রিক ধীর গতি এবং স্বল্পমেয়াদে ব্যয় হ্রাসের কারণে ডিজিটাল অর্থ প্রদানের পরিমাণ হ্রাস পাবে, তবে ডিজিটাল পদ্ধতিগুলো আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে শিগগিরই সরাসরি অর্থ প্রদানের সমস্ত শারীরিক পদ্ধতি ছাড়িয়ে যাবে।

## ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদান-প্রদানের উত্থান হবে

## বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভবান হবে

## সরকার কর্তৃক সাধারণ জনগনরে জন্য বিভিন্ন সাহয্য ও ব্যবসায়িদের দেওয়া প্রণোদনা অর্থনীতি সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এটি প্রত্যাশা করা যেতে পাওে যে ডিজিটাল অর্থ প্রদান আজ বাংলাদেশকে সামগ্রিক অর্থ প্রদানের যে হার রয়েছে তা আগামী ১২ মাসে ব্যক্তিগত খরচ ব্যয়ের দিগুণের বেশি হবে এবং পরবর্তী ৫ বছরে দ্রুত ৮০ শতাংশ স্তরে উন্নীত হবে এবং আরও বেশি বেশি গ্রাহক ডিজিটাল অর্থ আদান-প্রদানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বল মনে করি।
সুতরাং, ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতিগুলোয় সর্বোত্তম অর্থ প্রদানের সমাধানের জন্য একত্রিত করতে সর্বজনীন পেমেন্ট পদ্ধতি চালু করতে হবে, ব্যবহারকারীদের লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেওয়া এবং সর্বাধিক সুরক্ষিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

‘আধুনিক ব্যাংকিং পদ্ধতি হলো যে ব্যাংকগুলো আজকের চেয়ে আরও আগ্রাসীভাবে সমন্বয় হয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করবে এবং অনলাইন ব্যাংকিংকে খুব শীঘ্রই আরো উন্নত ও কার্যকর করবে।’

বিভিন্ন ইকমার্স প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভবান হবে: সামাজিক দূরত্বের কারণে আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইকমার্স প্ল্যাটফর্মে উত্থান বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। এ প্রবণতা লকডাউন পরবর্তী সময়ে আগের চেয়ে আরও বেশি অব্যাহত থাকবে। সুনাম রয়েছে এমন ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িরা সমৃদ্ধ হতে চলেছে; যেমন রকমারী, দারাজ, আজকের ডিল, ক্লিক বিডি, বাগডুম, বিডি জবস ইত্যাদি।

এছাড়া গ্লোবাল অনলাইন জায়ান্ট অ্যামাজন, আলীবাবা, গ্রোফারস, বিগ বাস্কেটবল, ফ্লিপকার্ট প্রভৃতি লকডাউন পরবর্তী বিশ্বে বড় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কোভিডের কার্যকর টিকা না পাওয়া পর্যন্ত লোকেরা ভিড় এড়িয়ে চলবে। এই সমস্ত সংস্থাগুলো লেনদেনের জন্য ডিজিটালি অর্থ প্রদান করতে সক্ষম হবেন। এ সংস্থাগুলো নগদ ছাড়াই সম্ভব বলে মনে করছেন।

পরিবর্তে, এই ইকমার্স সংস্থাগুােলর নিযুক্ত লক্ষ লক্ষ লোককে বেতন প্রদানের জন্য এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটালিও ব্যংকিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আনা হবে।

সরকার কর্তৃক সাধারণ জনগণের জন্য বিভিন্ন সাহায্য ও ব্যবসায়িদের দেওয়া প্রণোদনা: মহামারীর এই সংকটময় সময়ে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্নভাবে সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়িদের সহযোগিতা করবে। যে সব জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে বা দিন আনে দিন খায় বা আর্থিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তাদের জন্য সরকার বিভিন্ন স্কিম চালু করে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।

এছাড়া যে সব ব্যবসা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে- উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গার্মেন্টস, পোলট্রি, ভ্রমণ, পর্যটন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মল ইত্যাদির কথা। যে শিল্পগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যক্তিদের সরাসরি সহায়তার সম্ভাবনা যাদের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত কওে তারা হলেন অভিবাসী শ্রমিক, ভ্রমণকারী, হোটেল এবং পর্যটন শিল্পের কর্মচারী, অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মচারী ইত্যাদি।

এই সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষে সবচেয়ে ভাল উপায় হলো অনলাইন পদ্ধতিতে অর্থ প্রদান করা। ডিজিটাল পদ্ধতি যা সরাসরি সুবিধাদি সঠিক গ্রাহকে প্রদান করতে সক্ষম করবে এবং সরকারকে বিতরণ কার্যক্রম নিরীক্ষণ করতে সহায়তা করবে। তাই সকরারের উচিত হবে এ তহবিল কোথায় কিভাবে ব্যয় হচ্ছে- তা নিরীক্ষণ করার জন্য ডিবিটি (ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার) ধরনের প্রকল্পগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা।

এটা সুখবর যে প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ সুবিধাভোগিকে ২৫০০ টাকা করে সরাররি ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার মাধ্যমে প্রদানের কাজ সম্পন্ন করেছেন। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রনোদনা দেওয়ার অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যা অর্থনীতিকে সচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কোভিড-১৯ শুধু একটি স্বাস্থ্যগত জরুরি বিষয় নয়, বিশ্বব্যাপী একটি বড় আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে চলেছে এটি। যাইহোক, প্রতিটি যুদ্ধ বা সংকটের পরে স্থির অবস্থা বিকাশের একটি সময় অনুসরণ করা হয় এবং কোভিড পরবর্তী প্রবৃদ্ধি আসবেই আসবে। এ চিন্তাভাবনাগুলো আর্থিক সেবা খাতে কি ধরনের দিকনির্দেশনা দেয় তার সমান্য মাত্র তুলে ধরার প্রচেষ্টা।

লেখক: উন্নয়নকর্মী ও পরামর্শক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)
(মতামত লেখকের নিজস্ব, কর্তৃপক্ষের নয়)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০