প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়াপর বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
দেশে উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করতে হলে অবশ্যই আর্থিক খাতে যথার্থ সুশাসন থাকতে হবে। ব্যাংক হচ্ছে মানি মার্কেটের অংশ। ব্যাংকগুলোর স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেওয়ার কথা। আর দীর্ঘ সময়ের জন্য অর্থ জোগানোর কথা পুঁজিবাজারের। অথচ আমাদের দেশে উল্টোটি ঘটছে। উদ্যোক্তারা যখন ব্যাংক থেকে দীর্ঘ সময়ের ঋণ সুবিধা পাচ্ছে তখন তারা আর পুঁজিবাজারে আগ্রহী হচ্ছে না। ইদানীং অনেকের ধারণা হয়ে গেছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে আর ফেরত দিতে হয় না। তাই আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক সালাউদ্দিন চৌধুরী, এফসিএ।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার অনেক বড়। এ বাজেটে সব চেয়ে বেশি আলোচিত এবং আগ্রহের বিষয় হচ্ছে ব্যাংক খাত। ব্যাংক খাতে অত্যন্ত বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আছে। তারা তাদের নেতৃত্ব দিয়ে যতটা না নিজেদের গুছাতে পেরেছে তার থেকে ভালো সরকারকে বুঝাতে পেরেছে তাদের প্রয়োজনীয়তাটুকু। তারা কিন্তু নিজেদের নেতৃত্ব তাদের মতো করে ঠিকই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশে অনেক খাতেই নেতৃত্ব আছে কিন্তু তারা তাদের খাতকে সেভাবে তুলে ধরতে পারে না। অথচ ব্যাংক খাতের নেতারা যেভাবেই হক সরকার ও রাষ্ট্রকে ঠিকই সন্তষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ব্যাংক খাত জড়িত। কারণ ব্যাংকের শেয়ারের অংশ পুঁজিবাজারে অনেক বড় এবং সামনে আরও ব্যাংক আসবে বাজারে। কাজেই ব্যাংক খাতই পুঁজিবাজারে নেতৃত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ খাতের যে অব্যবস্থাপনা এবং অর্থিক কেলেঙ্কারিগুলো আসলেই চিন্তার বিষয়। কিন্তু এসব কেলেঙ্কারির জন্য কোনো রকমের সাজার ব্যবস্থা দেশের জনগণ বা রাষ্ট্র করতে পারেনি। বরং ব্যাংকাররা তাদের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা তাদের দুর্বলতাগুলোকে কোনোভাবেই সামনে আসতে দেয়নি। যা সরকার, রাষ্ট্রসহ দেশের আমজনতাও জানে এবং এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রচুর আলোচনাও হয়েছে। তারপরও এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যাংকে মালিকদের অংশ কিন্তু খুবই ছোট এবং এখানে সঞ্চিত প্রায় সবটুকু জনগণের সম্পদ। আর এ আমানত গ্রহণকারী হিসাবে ব্যাংকগুলোর একটি ঈমানি দায়িত্ব আছে। তাছাড়া অন্যের টাকা দিয়ে বাহাদুরি করা ঠিক না। অন্যদিকে রাষ্ট্র থেকে প্রতিবার ভর্তুকি দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে সুবিধা দেওয়া হবে আর কতিপয় লোক আইনবহির্ভূতভাবে এটিকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করবে তা কাম্য নয়। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই এখানে যে শৃঙ্খলার অভাব হয়েছে তা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি।
সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হব তার বড় ব্যাকআপ হচ্ছে আর্থিক খাত। একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী আর্থিক খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেমন আর্জেন্টিনায় যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। কিন্তু তারা তা ধরে রাখতে পারিনি শুধু আর্থিক খাত দুর্বল ছিল বলে। আমাদেরও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আমরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করছি তা অর্জন করতে হলে অবশ্যই আর্থিক খাতের যথার্থ সুশাসন থাকতে হবে। ব্যাংক হচ্ছে মানি মার্কেটের অংশ। ব্যাংকগুলোর স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। আর দীর্ঘ সময়ের ফান্ডগুলো আসার কথা ছিল পুঁজিবাজার থেকে। অথচ আমাদের দেশে উল্টোটি ঘটছে। উদ্যোক্তারা যখন ব্যাংক থেকে দীর্ঘ সমযের ঋণের সুবিধা পাচ্ছে তখন তারা আর পুঁজিবাজারে আগ্রহী হচ্ছে না। ইদানীং অনেকের মানষিকতা এমন হয়ে গেছে যে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তো আর ফেরত দিতে হবে না। আমি মনে করি আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম