আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইন অনুযায়ী, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে। যাতে কোম্পানির আয়-ব্যয় অতিরঞ্জিত করে বিনিয়োগকারী ও সরকারকে না ঠকাতে পারে। এটি দেখভাল করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখিনি। তাই সামনেও যাতে সততা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত থাকে। যদি কোনো রকমে প্রতিষ্ঠানটির কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে মানুষের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ।
সুলতান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে চঞ্চলতা কমে গেছে। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে পুঁজিবাজারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। এখন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা ছিল করোনাভাইরাস সেটাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রামণের আগে থেকেই পুঁজিবাজার একটি বিপর্যয়ের মধ্যে ছিল। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস পুঁজিবাজারকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলেছে এবং একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এদিকে আবার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এক জায়গায় বেশি মানুষের সমাগম থাকতে পারবে না। ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় সশরীরে উপস্থিত হয়ে অনেকে শেয়ার কেনাবেচা করছেন। এখানে সতর্কতার বিষয় রয়েছে। কারণ ভাইরাসটি ছোঁয়াচে। যেহেতু আমাদের পুঁজিবাজার প্রযুক্তিনির্ভর সেক্ষেত্রে টেলিফোন, অনলাইন কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করার সুযোগ রয়েছে। তাই পুঁজিবাজার বন্ধ করার আগে বিচার-বিশ্লেষণ করার বিষয় রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড খুব কঠোরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউসগুলো সতর্কতার ব্যবস্থা নিতে পারে। পুঁজিবাজার একদিন মাত্র ৩০ মিনিট লেনদেন হয়েছে। আসলে পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদি এ সিদ্ধান্ত না নেওয়া হতো তাহলে বাজার আরও খারাপের দিকে যেত। নিঃসন্দেহে ডিএসই ও বিএসইসির এ সিদ্ধান্তটি বাজারের জন্য সময়োপযোগী ছিল।
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইন অনুযায়ী, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে। যাতে কোম্পানির আয়-ব্যয়ে অতিরঞ্জিত করে বিনিয়োগকারী ও সরকারকে না ঠকাতে পারে। এটি দেখভাল করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এফআরসি। কারণ আগে কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে আর্থিক প্রতিবেদন করত না। এক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পাঁচ বছরে একসঙ্গে করা হতো। কারণ এখানে অনেকের স্বার্থ জড়িত থাকত। এফআরসি প্রতিষ্ঠা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতে আনা। এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখিনি। তাই সামনেও যাতে সততা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত থাকে। যাতে হাসির পাত্র না হয়। কারণ এটি যেনতেন প্রতিষ্ঠান না। যদি কোনো রকমে প্রতিষ্ঠানটির কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে মানুষের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ