আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্যোগ নিন

সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশ অতিক্রম করলে বিষয়টিকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু দেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এই খেলাপির পরিমাণ এ যাবৎকালে আর্থিক খাতের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থনীতির চাকা ঠিক রাখতে হলে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘রেকর্ড ২১৬৫৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর তিন মাস আগে গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের এমন উল্লম্ফন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এর আগে গণমাধ্যমে বারংবার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে যে, আর্থিক খাতের শীর্ষ অনেক কর্মকর্তা ঋণ অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত নাম হচ্ছে পিকে হালদার। তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেবল পিকে হালদারই নন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনেক কর্মকর্তাই উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে। এমনকি খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাও এসব অনিয়মে সামিল হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া দুর্ভাগ্যজনক বৈকি। যাদের অনিয়ম রোধ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা যদি অনিয়মের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন, তাহলে সাধারণ আমানতকারীদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।

কথিত আছে, যেসব ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে, তার একটি বড় অংশ অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। এমনকি সরকারের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদেরও বিদেশে অবৈধ ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবেই সুখকর নয়। সার্বিকভাবে অর্থনীতির শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থা সৃষ্টি করা আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যত্নবান হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০